‘জিডিপিতে বেসরকারি খাতের অবদান কমে যাওয়া উদ্বেগের বিষয়’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে ট্রিলিয়ন ডলারের স্মার্ট অর্থনীতিতে পরিণত করতে সাতটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ‘জিডিপিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের অবদান কমে যাওয়াটা উদ্বেগের বিষয়।’

রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

আশরাফ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ট্রিলিয়ন ডলারের স্মার্ট অর্থনীতিতে পরিণত করতে হলে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, ব্যবসা পরিচালনা সূচকের উন্নয়ন, টেকসই নীতি সংস্কার, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা একান্ত অপরিহার্য। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ এই সেমিনারে ২০২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি স্থানীয় অর্থনীতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ, জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, সিএমএসএমই, তথ্য-প্রযুক্তি এবং সেবা খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, ‘জিডিপিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের অবদান কমে যাওয়াটা উদ্বেগের বিষয়। পাশাপাশি স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, সহনীয় মূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তি, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন জরুরি। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিষয়গুলোর মধ্যকার সমন্বয় আবশ্যক। এলডিসি পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রফতানি পণ্যের বহুমুখীরণ এবং বাজার সম্প্রসারণে আমাদেরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে বলে ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন।

এছাড়া তিনি উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সম্প্রসারণের ওপর জোরারোপ করেন। সম্প্রতি তৈরি পোশাক খাতে প্রণোদনা সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই বেসরকারি খাতকে অবহিত করলে, বেসরকারি খাত সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সক্ষমত হবে। পাশাপাশি চামড়া খাতে দ্রুততম সময়ে ইটিপি স্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন, এপিআই পার্কে সব সেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে চালু করা, সিএমএসএমই খাতে অর অর্থায়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়ানো এবং খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।    

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দশকে আমাদের অর্থনীতির মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, তার মধ্যে বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ অন্যতম। এমতাবস্থায় যেকোনও নীতির সফল বাস্তবায়ন হবে না— যদিনা ব্যক্তি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে মূল্যায়ন করেই নীতি প্রণয়ন না হয়।’ সেইসঙ্গে বেসরকারি খাতকে সব সমস্যা সমাধানে সরকারের ওপর নির্ভর করার পরামর্শ প্রদান করেন।

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুরনো কথাবার্তা এখনও চলছে, বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনাা প্রয়োজন।’ দেশের জাতীয় আয় ও রাজস্বের অনুপাত বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কর ব্যবস্থার হারের গড়মিলের কারণে করদাতাকে অনেক সময় নির্ধারিত করের চেয়ে বেশি কর প্রদান করতে হচ্ছে, যা কাম্য নয়। বিনিয়োগে স্থাবিরতা কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগের আকর্ষণের কোনও বিকল্প নেই।’ তবে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে প্রাপ্তিতে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতির স্থিতিশীলতার কোনও বিকল্প নেই।’ তিনি উল্লেখ করেন, রফতানি পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে কারও কোনও দ্বিমত নেই। তবে নতুন পণ্য এবং নতুন বিনিয়োগ বিষয়ে নানামুখী চাপও রয়েছে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমাদের আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ ইউনুস, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. আশিকুর রহমান সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।