আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি শেষ হয়েছে। সোমবার (৫ মে) সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়ে অনলাইনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দুই ডেপুটি গভর্নর প্রতিনিধিত্ব করেন।
বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল ডলারের বিনিময় হারে আরও নমনীয়তা আনা ও আইএমএফের চাওয়া ‘ফ্রি ফ্লোটিং’ মডেল বাস্তবায়ন। জানা গেছে, এই বিনিময় হার ব্যবস্থার বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে আটকে আছে ১৩০ কোটি ডলারের কিস্তি। এটি ৪৭০ কোটি ডলারের মোট ঋণ প্যাকেজের একটি অংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, আজকের বৈঠকই ছিল এক ধরনের ‘ডিসিশন পয়েন্ট’। কারণ ওয়াশিংটনে বসন্তকালীন বৈঠকে কোনও চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র বলছে, আইএমএফের সামান্য কিছু ঋণের জন্য সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মতো কোনও শর্ত মেনে নিতে চায় না বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আইএমএফের এই কিস্তি ছাড়ের বিষয়টিকে খুব বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে না।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে অনলাইনে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। তারা কিস্তি ছাড় করতে চায় বলেই এই আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা এমন কোনও শর্ত মানবো না, যাতে জনগণের কষ্ট হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও আলোচনা আশাব্যঞ্জক ছিল। আগামী দিনগুলোতে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। তবে আইএমএফ তা থেকে নির্দিষ্ট দায় বাদ দিয়ে ‘নেট রিজার্ভ’ হিসাব করে, যা ঋণের কিস্তি ছাড়ের একটি প্রধান মানদণ্ড। বাংলাদেশ ব্যাংক এনআইআর ফ্লোর বাতিলের প্রস্তাব দিলেও আইএমএফ এখনও তাতে সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আইএমএফ যদি অতিরিক্ত শর্ত চাপিয়ে দেয়, বাংলাদেশ তখন আর এই ঋণ নিতে আগ্রহী থাকবে না।’