জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রবিবার (২৪ মে) ও সোমবার (২৫ মে) পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন শুল্ক ও কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে চলমান এই আন্দোলনের ফলে দেশের রাজস্ব প্রশাসনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (২৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এনবিআর ভবনসহ দেশের বিভিন্ন কর, শুল্ক ও ভ্যাট কার্যালয়ে কাজ কার্যত বন্ধ ছিল। এনবিআর কর্মকর্তারা নিজ নিজ দফতর ছেড়ে নিচতলায় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন। ঢাকার বাইরের দফতরগুলোতেও একই ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আগামী দুই দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী, রবিবার (২৬ মে) আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন ছাড়া বাকি সব আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করা হবে। সোমবারও একইভাবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা বাদে বাকি দফতরগুলোয় কর্মবিরতি চলবে।
চার দফা দাবি
কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ চার দফা দাবি উত্থাপন করেছে—
১. সদ্য জারি করা ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ অবিলম্বে বাতিল করা,
২. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ,
৩. রাজস্ব সংস্কার-সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ প্রকাশ করা,
৪. প্রস্তাবিত খসড়া ও সুপারিশ সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের মতামত নিয়ে পুনর্বিন্যাস করা।
সংগঠনের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, দাবি পূরণে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণার ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হতে পারে। তারা বলেন, রাজস্ব আহরণ ও অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার স্বার্থেই এই দাবি। পূরণ হলে আমরা অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে পিছিয়ে পড়া কার্যক্রম শেষ করব।
গত মঙ্গলবার (২০ মে) আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের তিন উপদেষ্টার বৈঠকেও সমাধান না আসায় অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিয়েছে, শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণপূর্বক অধ্যাদেশ সংশোধনের জন্য আলোচনা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত অক্টোবরে গঠিত পাঁচ সদস্যের রাজস্ব সংস্কার কমিটি জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেয়। সেখানে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আলাদা করার সুপারিশ করা হয়, যার ভিত্তিতে সরকার ১২ মে নতুন অধ্যাদেশ জারি করে।
তবে এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত তাদের প্রশাসনিক কাঠামো ও দফতরের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। ফলে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী থেকে জেলা পর্যায়ের দফতরগুলোতেও।
শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান কর্মবিরতি আগামী দুই দিন রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই অচলাবস্থা দেখা দিল, যখন অর্থবছরের শেষ প্রান্তে সরকারের রাজস্ব আহরণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত সমাধান না হলে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।