নারী উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তুলে ধরার লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন, এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ভিসা’র যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ‘বিজনেস পিচ কম্পিটিশন’। বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে নির্বাচিত তিন উদ্যোক্তা পুরস্কৃত হয়েছেন।
প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ‘ইউনিক হোম’-এর শারমিন সুলতানা পেয়েছেন ৫ হাজার মার্কিন ডলার, দ্বিতীয় হয়েছেন ‘আইন সেবা’র উদ্যোক্তা রহিমা হক, যিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ডলার। তৃতীয় স্থান অর্জন করেন ‘রোড বুক বিডি’র তাকিয়া সুলতানা নোভা। তার পুরস্কার ৩ হাজার মার্কিন ডলার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান।
আয়োজকরা জানান, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বান জানানো হলে ৯২টি আবেদন জমা পড়ে। সেখান থেকে বাছাই করে ২৪ জন নারী উদ্যোক্তাকে দুই দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে মূল্যায়ন ও সরেজমিন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ১০ জনকে চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয়।
জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন— বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ) নওশাদ মুস্তাফা, পারসোনার সিইও কানিজ আলমাস খান, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবিন এবং বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট হুসনা ফেরদৌস সুমি।
অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা খান, ভিসার কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান) সাব্বির আহমেদ এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের মঙ্গোলিয়ার ভিজিটিং কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সারা টেইলর উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন বলেন, বাংলাদেশকে একটি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এসএমই খাত একটি অনুঘটক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস গঠনে এ ধরনের প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভিসার কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করে। উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ও উদ্যোক্তা শক্তিকে উৎসাহিত করতে আমরা এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে ছিলাম।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি সারা টেইলর বলেন, নারী উদ্যোক্তারা যেভাবে সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপ দিচ্ছেন, তা অভাবনীয়। তারা কেবল নিজেদের ভবিষ্যত নয়, দেশের এসএমই খাতকেও নতুন দিশা দেখাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৭৮ লাখের বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশেরও বেশি। দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশই এসএমই খাত থেকে আসে, যেখানে প্রায় আড়াই কোটির বেশি মানুষ সরাসরি নিয়োজিত। এসএমই ফাউন্ডেশন সরকার ঘোষিত শিল্পনীতি ২০২২ ও এসএমই নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি ২০৩০) বাস্তবায়নে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন জানায়, প্রতিষ্ঠানটি এখনও পর্যন্ত লক্ষাধিক নারী উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা প্রদান করেছে এবং ভবিষ্যতেও নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে কার্যকর কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।