কংক্রিটের ভাঁজে ভাঁজে যে আলোর মিছিল

আলোর মিছিল প্রদর্শনীতে ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরালোহালক্কড় আর কংক্রিটের ভাঁজে ভাঁজে চোখ ধাঁধানো আলোর মিছিল। এই আলোকের ঝর্ণাধারার স্থিরচিত্র সৌন্দর্য পিপাসুদের কেবল মোহিতই করে না, তাদের স্মরণ করিয়ে দেয় দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ইতিহাসও। চিত্রশিল্পী জাহাঙ্গীর আলম জনির তোলা দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর এমনই কিছু স্থিরচিত্রের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় যাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে। এই প্রদর্শনীর সাজানো ছবিগুলো তুলে ধরা হয়েছে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধারাবাহিক ইতিহাস। রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ছিল এই প্রদর্শনীর শেষদিন। এই আয়োজনের শেষবেলায়ও ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়।

প্রসঙ্গত, ১৯৬২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ৫৬ বছরে দেশে ১২৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছবি, সঙ্গে ছোটো একটি ক্যাপশন দিয়ে সাজানো হয়েছে চিত্রপ্রদর্শনীটি।

আলোর মিছিল প্রদর্শনীতে ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা

একের পর এক বিভিন্ন আকারের ফ্রেমে বাঁধানো বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে গ্যালারি। কোনোটি দিনের আলোয় নীল আকাশে পটভূমিতে তোলা, কোনোটি রাতের বেলা ঝলমলে আলোয় তোলা ছবি।

গ্যালারিতে ঢুকতেই বাম পাশের দেয়ালে দেশের প্রথম জল বিদ্যুৎকেন্দ্রর ছবি।১৯৬২ সালে কাপ্তাইয়ে ৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি  নির্মাণ করা হয়। ছবিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের বিভিন্ন পর্বের গল্প সাজানো হয়েছে। সবশেষে দেওয়া হয়েছে এগ্রিকো নির্মিত আওড়াহাটি-১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে। যে কেন্দ্রটি গত জুনে উৎপাদনে আসে।

আলোর মিছিল শীর্ষক প্রদর্শনীতে ছবি

এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সবচেয়ে ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে—প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছবির নিচে এর পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে রয়েছে নির্মাণে সাল ও এলাকা। রয়েছে কোনও এলাকার মানুষ আলোকিত হয়েছে তার বর্ণনা রয়েছে। এখানে রংপুর, সৈয়দপুর, বরিশালের ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছবিগুলো যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কম্বাইন্ড সাইকেল বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছবি।শুধু যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এসেছে, সেগুলোর ছবিই স্থান পেয়েছে এই আয়োজনে।

আলোকচিত্রী জাহাঙ্গীর আলমের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে জনির ‘মধ্যম আয়ের অগ্রযাত্রায় শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ স্লোগানে ‘আলোর মিছিল’ শীর্ষক এই একক চিত্র প্রদশর্নীর উদ্বোধন করা হয়। চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ছোট ছোট বর্ণনা দিয়ে একটি বইয়ের  মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

৪৪৪৪

প্রসঙ্গত, আলোকচিত্রী জাহাঙ্গীর আলম জনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোডের (পিডিবি) একজন ফটোগ্রাফার। তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই প্রদশর্নী। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই ছবিগুলো তুলেছি। প্রতিটি ছবির পেছনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেক ছবি তুলতে গিয়ে আমাকে দুর্গম জায়গায়ও যেতে হয়েছে। অনেক সমস্যারও সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু পিছিয়ে পড়িনি। অনেকেই এই চিত্র প্রদর্শনী করার ব্যাপারে নিরুসাহিতও করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত প্রদর্শনীটি করতে পেরে আমি আনন্দিত। প্রদর্শনীতে যারা এসেছেন, তারা সবাই আগ্রহ ভরেই ছবিগুলো দেখছেন।