টিআর-কাবিখার অর্থে সোলার পাম্প নয়

সৌর বিদ্যুৎ চালিত সোলার পাম্প, ছবি: সংগ্রহীতটেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি  প্রকল্পের আওতায় আর কোনও সোলার সেচ পাম্প প্রকল্প গ্রহণ করতে চায় না বিদ্যুৎ বিভাগ। এর আগে টিআর-কাবিখার অর্থায়নে বিভ্ন্নি এলাকায় ৪০টি সোলার পাম্প বসিয়েছিল পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। কিন্তু ওই পাম্পগুলোর সবকটিই  বিকল হয়ে পড়ে আছে। পাম্পগুলো যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা ছিল তার কিছুই করা হয়নি বলে আরইবির তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

আরইবি সূত্র বলছে, টিআর-কাবিখার অর্থায়নে এ ধরনের পাম্প বসাতে প্রতিটির জন্য তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। কৃষকদের সুবিধার্থে বিনামূল্যে সরকার এসব পাম্প বসিয়ে দেয়। কিন্তু পাম্পগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথভাবে না করায়, ১-৩ বছরের মধ্যে সবগুলো পাম্প বিকল হয়ে গেছে। সাধারণত এ ধরনের একটি পাম্প ২০ বছর পর্যন্ত চলতে পারে।

ইডকলের সোলার ইরিগেশন প্রোগ্রাম একটি নির্দিষ্ট ব্যবসা প্রথা অনুসরণ করে বাস্তবায়ন করা হয়। আর টিআর-কাবিখা, কাবিখা বা কাবিটা এর সোলার সেচপ্রকল্প শতভাগ অনুদান হিসেবে করে দেওয়া হয়। ফলে টিআর-কাবিখা বা কাবিটার সোলার সেচপ্রকল্প অব্যাহত থাকলে, নির্দিষ্ট ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণে করা অন্যান্য সোলার ইরিগেশন প্রোগ্রাম (ইডকল, আরইবি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের) ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে টিআর-কাবিখার আওতায় সোলার সেচ পাম্প স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধি জানান, টিআর-কাবিখার আওতায় সোলার ইরিগেশন স্থাপন কার্যক্রমটি টিআর-কাবিখার মূল উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন। কেননা, এ ধরনের সিস্টেম স্থাপনের ব্যয় অনেক বেশি। এছাড়া এখানে উপকারভোগী  মাত্র কয়েকজন কৃষক, যাদের নিজস্ব জমি আছে। অন্যদিকে, স্থাপিত সিস্টেমটির মালিক কে হবেন, সিস্টেমটির অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স কে করবেন ইত্যাদি বিষয়ও স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনা করে টিআর-কাবিখার আওতায় সোলার ইরিগেশন পাম্প স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।

জানা যায়, টিআর-কাবিখার আওতায় শতাভাগ অনুদান স্থাপিত পাম্পের ক্ষেত্রেও মালিকানা, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স নিয়ে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা  রয়েছে। টিআর-কাবিখার আওতায় একটি উপজেলায় গড়ে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। ছোট আকারের সোলার ইরিগেশন পাম্প স্থাপন করতেও তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। ফলে টিআর-কাবিখা বা কাবিটার আওতায় সোলার ইরিগেশন পাম্প স্থাপন করা হলে, খুব বেশি মানুষকে সহায়তা করা যাবে না।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন বলেন, ‘একই জায়গায় দুই ধরনের মডেল তো চলতে পারে না। ইডকল বিজনেস মডেলে গিয়ে সোলারের সেচ পাম্পগুলো চালাচ্ছে। সেচের যে পানি ওঠে সেটি কৃষকরা একটি নির্দিষ্ট মূল্যে কিনে নিচ্ছে, তাতে সোলারের খরচটা উঠে আসছে। এই অবস্থায় যদি কাবিখার মাধ্যমে বিনামূল্যে দেয়, তাহলে তো তারা আর ইডকলের সোলারের সেচ পাম্প থেকে পানি নেবে না। একই জায়গায় দুই ধরনের মডেল তো চলবে না।’

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলেন, ‘কাবিখার অধীনে যে পাম্প দেওয়া হচ্ছে, সেটি পরিচালনার করার কেউ থাকে না। কারণ ইডকল তো একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে সেগুলো ব্যবস্থাপনা করে। ফলে ইডকলের পাম্পগুলো সব সময় ভালো থাকে। কিন্তু কাবিখারগুলো ঝড়, বৃষ্টি, রোদ ও ধুলায় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এ ধরনের প্রকল্প বাদ দেওয়া উচিত ।’ তাতে অন্যখাতে এই টাকা খরচ করা সহজ হবে বলেও মনে করেন তিনি।