প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারে বিদ্যুৎ-গ্রাহকদের আগ্রহী করতে বিশেষ উদ্যোগ

প্রি-পেইডপ্রি-পেইড মিটারে গ্রাহকদের বিভ্রান্তি দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। প্রি-পেইড মিটার বসানোর সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাহদের মধ্যে জনমত তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষ সহজে প্রযুক্তির পরিবর্তন করতে চায় না। তাই পুরনো প্রযুক্তি ছাড়তে চাইছেন না অনেকে। সম্প্রতি প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যুৎ-বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন কোনও কোনও ব্তিরণ কোম্পানির কর্মীরা। কোনও কোনও এলাকায় প্রতিরোধের মুখেও পড়েছেন তারা। খুলনা, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জে প্রি-পেইড মিটার প্রতিরোধে মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে।

আরইবি সূত্র বলছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর  স্থানীয়ভাবে তাদের প্রি-পেইড মিটারের সব দিক জানানো হচ্ছে। কোথাও সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে আরইবির পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে একটি মহল প্রি-পেইড মিটার সম্পর্কে সবকিছু না জেনে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। প্রি-পেইড মিটার স্থাপনকাজে বাধা দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত করার অপ-প্রয়াস চালাচ্ছে। তাই, আগে থেকেই আমরা গ্রাহককে খুঁটিনাটি বিষয়ে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারে গ্রাহক যেমন সবকিছু নিজে দেখতে পারে, বুঝতে পারে তেমনি গ্রাহক তার বাজেটের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’

আরইবির পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে স্থাপিত প্রি-পেইড মিটার গ্রাহকদের রিচার্জ পরিমাণের ওপর সরকার ১ ভাগ ভর্তুকি দিচ্ছে। প্রকৃত ব্যবহারের ওপর প্রি-পেইড মিটার বিল করা হয়। ফলে কোনও আনুমানিক বা ভৌতিক বিল হওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া, প্রি-পেইড মিটারে ভোল্টেজ লিমিট সেট করে দেওয়া যায়, যার মাধ্যমে গ্রাহকের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো ওভার ভোল্টেজ কিংবা আন্ডার ভোল্টেজ হতে রক্ষা করা সম্ভব।’

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করতে গিয়ে গ্রাহক ভোগান্তি ও বাড়তি বিলের অভিযোগের বিষয়ে আরইবির একজন কর্মকর্তা জানান, ‘বর্তমানে স্থাপিত প্রি-পেইড মিটার থেকে গ্রাহক নিজেই তার চলমান লোড, ব্যবহৃত ইউনিট, অবশিষ্ট টাকা, পূর্ববর্তী ৬ মাসের মাসভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহার ও ব্যবহৃত টাকার তথ্য জানতে পারবেন। এছাড়া, টাকা শেষ হয়ে গেলে এমার্জেন্সি ক্রেডিট (ধার করা) হিসেবে ১০০ টাকা ব্যবহার করতে পারেন। ইমার্জেন্সি ক্রেডিট (ধার করা) শেষ হলে বিকাল ৪টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ফ্রেন্ডলি আওয়ার হিসেবে মিটার সচল থাকবে। একইসঙ্গে সরকারি ছুটির দিনে মিটার সচল থাকে। তবে, এসব সুবিধা প্রতিবার রিচার্জের জন্য একবার গ্রাহক ভোগ করতে পারবেন।

আরইবি জানায়, তাদের ১১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে প্রি-পেইড মিটার রয়েছে। এরমধ্যে মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুরে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। যা নিরসন হয়েছে। এখন যেখানেই নতুন মিটার লাগানো হবে, সেখানেই আগে মিটারটির ব্যবহার সম্পর্কে গ্রাহককে ধারণা দেওয়া হবে।’

আরইবির প্রি-পেইড মিটারের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বর্তমানে ১০ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের একটি প্রকল্প চলমান আছে। এরমধ্যে আমরা গতকাল পর্যন্ত চার লাখ ছয় হাজার মিটার স্থাপন করেছি। বাকি ৫ লাখ ৯০ হাজার মিটার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থাপন করা হবে। ১০ লাখ মিটারের এই প্রকল্পটির জন্য ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আস্তে আস্তে সব গ্রাহককের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ঢাকার আশেপাশে ১০ লাখ গ্রাহককে এই মিটার দেওয়া হবে। সাভার, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ আশেপাশের সমিতিগুলোয় এক লাখ করে মিটার দেওয়া হবে।এছাড়া আরও ৩২ লাখ স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার বসানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।’

আরইবি জানায়, প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্রাহকরা অফিসে বা ব্যাংকে না গিয়ে আশেপাশের ভেন্ডিং স্টেশন, ব্যাংক, মোবাইল রিচার্জ সেন্টার থেকে কিংবা গ্রামীণফোন বা রবির অ্যাপসে মাধ্যমে নিজে নিজের ঘরে বসেই প্রি-পেইড মিটারের রিচার্জ টোকেন কিনতে পারবেন। এতে গ্রাহকদের বিল পরিশোধে অর্থ ও সময় দু’টোই সাশ্রয় হবে। ভবিষ্যতে এই সেবাটি আরও আধুনিকায়ন করে মিটারে টোকেন এন্ট্রি না করে অনলাইনের মাধ্যমে সরাসরি মিটার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে আরইবি।

সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের মধ্যে দুই কোটি গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বিআরইবি। গত জুলাই মাসের হিসেবে এখন আরইবির গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে সরকার প্রথম প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আরইবি মিটার স্থাপনের এই উদ্যোগ নিয়েছে।