‘শিল্পে জ্বালানি সাশ্রয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে’

‘প্রাথমিক জ্বালানির ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় শিল্পে। কিন্তু সমন্বিতভাবে কাজ  করা গেলে ২১ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। শিল্প ছাড়া কৃষি ও পরিবহন খাতেও জ্বালানি সাশ্রয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য সমন্বিতভাবে সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।’, ‘শিল্পের সাশ্রয়ী এনার্জি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। 

বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ইডকলের আয়োজনে ও ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’  ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনায় ‘শিল্পের সাশ্রয়ী এনার্জি’ শীর্ষক ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ইডকল যে ঋণ দেয়, সেই ঋণের জায়গা বাড়াতে হবে। এসএমইকেও এর আওতায় আনা যেতে পারে। এখন কৃষিও একটি শিল্পের মতো হয়ে যাচ্ছে। অনেক যন্ত্রপাতি আসছে, সেচের যন্ত্রপাতি সাশ্রয়ী হলে অনেক কাজে আসবে। পরিবহন খাতেও মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শিল্প মালিকরা যদি বুঝতে পারেন যে, সাশ্রয়ী হলে তাদের বিলও কমে আসবে, খরচ কমবে তাহলে, এটি আরও সহজ হবে। শিল্পে জ্বালানি সাশ্রয়ে মূলত সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

বিশেষ অতিথি জাতিসংঘের ক্লাইমেট ভার্নারেবল ফোরামের বিশেষ প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি  বা সবুজ কারখানা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। সাশ্রয়ের কথা না বলে এতে খরচ কমবে, সেটি আগে বলতে হবে। পাশাপাশি স্রেডাকে  এনার্জি অডিটিং এর গতি বাড়াতে হবে। টেস্টিং ল্যাবরেটরি শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, আঞ্চলিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। যন্ত্রাংশের মান নির্ধারণেও গতি বাড়াতে হবে। সে কারণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে যেতে হবে আমাদের।’

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন,‘আমরা যদি গ্রিন হাউস গ্যাস ইমিশন কমাতে চাই, তাহলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এবং সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারমধ্যে অতিরিক্ত খরচ কীভাবে কমানো যায়। আমরা যদি কম সুদে ঋণ দিতে পারি, আর যদি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি স্থাপনে ট্যাক্স ইনসেনটিভ দেওয়া হয়, তাহলে এসব প্রকল্প বেশি করে বাস্তবায়ন হবে। পুরনো যন্ত্রপাতি সরিয়ে সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি, এখানে যদি অদক্ষ যন্ত্রপাতিকে বেশি ট্যারিফ আরোপ করা যায়, তাহলে বেশি মনোযোগী হবে। সবমিলিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ে যন্ত্রপাতি টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন। তাহলে আমরা এনার্জি সাশ্রয়ী নিশ্চিত করতে পারবো।’

বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলেন, আমাদের ‘বিনিয়োগ অবশ্যই গ্রিন হতে হবে। আমরা টেকনোলজি আপগ্রেডেশন ফান্ড চেয়েছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এক হাজার কোটি টাকা ফান্ড গঠন করেছে। টেকনোলজি আপগ্রেডেশন মানেই গ্রিন ফিন্যান্সিং। তবে গ্রিন ফিন্যান্সিং ঠিকমতো হয় না। হলেও আমরা নিতে পারি না ঠিকমতো। এগুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা স্রেডার সঙ্গে এমওইউ করতে চাই। এটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শিল্পে সাশ্রয়ে যতগুলো উদ্যোগ রয়েছে সবগেুলোর সঙ্গে থাকতে চাই।’

সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘প্রাইমারি এনার্জি ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় শিল্পে। শিল্পে সাশ্রয়ী হলে ২১ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। বিএসইসি ও বিসিআইসি ৪টি শিল্পে এনার্জি অডিট করা হয়েছে। এখানে হাই কোয়ালিটি প্রোডাক্ট তৈরি হচ্ছে। চাহিদার স্বল্পতা এবং পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে পুরোদমে উৎপাদন হচ্ছে না। অডিটের অভিজ্ঞতা হচ্ছে— প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এনার্জি সেভ করার।’

অন্যদের মধ্যে স্রেডার সাবেক সদস্য সিদ্দিক জুবায়ের, বিটিএমএ ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্যাহ আল মামুন,তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মুহিম হাসান, সুং শিং সিমেন্টের সিএফও কাওছার আলম এবং ইডকলের ইডি ও সিইও মাহমুদ মালিক বক্তব্য রাখেন।/এসএনএস/ এপিএইচ/