আশা দেখাচ্ছে সৌর সেচ পাম্প

সেচ পাম্পে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বদলে দিতে পারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চিত্র। সারাদেশে সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায় দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটে। অন্যদিকে সেচের জন্য ডিজেলের চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। পাম্পগুলো সৌর বিদ্যুতে চালালে জ্বালানির এই চাহিদা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে- সেচ মৌসুমে রাত ১১টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অফপিক সময়ে (বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে) সেচ পাম্প চালাতে হবে। অর্থাৎ প্রতিদিন সাত ঘণ্টা চলবে একটি পাম্প। সৌর বিদ্যুতে গড়ে একটি পাম্প পাঁচ ঘণ্টা পানি তুলতে পারে। বাকি সময়ে কী হবে, এ প্রশ্নে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিদ্যুতে চলা সেচ পাম্পের তুলনায় দ্বিগুণ ক্ষমতার সৌর সেচ পাম্প বসাতে হবে। তবেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ব-দ্বীপে অবস্থিত হওয়ায় কৃষিতে সেচ বেশ জরুরি। কৃষির খরচের ৪৩ ভাগই সেচের পেছনে হয়।

বিদ্যুত বিভাগের সেচ পুস্তিকা-২০২১ এ বলা হয়, সারাদেশে বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৭টি। গেল বছর যা ছিল ৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৮১টি।

সারাদেশে এই পাম্প চালাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় দুই হাজার ৪১১ মেগাওয়াট। আবার সেচ মৌসুম মানেই (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) গ্রীষ্মকাল। এজন্য সেচে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে গরমে চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে সরকার হিমশিম খায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন পাম্পগুলো যদি একেবারেই গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ না নেয় তবে চাপ কমবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ এখন সেচের পরে আর অপচয় হওয়ার সুযোগ সেই। সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) এই বিদ্যুৎ গ্রিডে যোগ করার ব্যবস্থা করেছে। যেহেতু দেশের সব জায়গাতে বিদ্যুৎ পৌছে গেছে তাই সেচের বাইরেও এখান থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারেন উদ্যোক্তারা।

সেচের জন্য তিন ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে গভীর নলকূপে ২০ কিলোওয়াট, অগভীর নলকূপে ৩ কিলোওয়াট এবং লো লিফট পাম্পে ১২ কিলোওয়াটের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। একজন গ্রাহক যত কিলোওয়াটের পাম্প বসাবেন ততো কিলোওয়াটের মোটরই চালাতে পারবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৬০ হাজার টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকা লাগে এসব পাম্প বসাতে। এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে সরকারের তরফ থেকে অর্ধেক অর্থ অনুদান হিসেবেও দেওয়া হয়েছে।

দেশে প্রায় ১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডিজেলচালিত সেচ পাম্প ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব পাম্পে সোলার প্যানেল বসালে এতো ডিজেলের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছে স্রেডার কর্মকর্তারা।

এতো এতো আশাব্যাঞ্জক খবরের পরও দেখা গেলো দেশে সৌরচালিত সেচ পাম্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। ধারণা করা হচ্ছে এর সংখ্যা কয়েক হাজার। সরকারের উদ্যোগের বাইরেও অনেকে সোলার পাম্প বসিয়েছে।

স্রেডা বলছে, এখন যে সোলার ইরিগেশন সিস্টেমগুলো আছে, সেগুলো বছরের অর্ধেকের বেশি সময় অব্যবহৃত থাকে। আর তাই সোলার ইরিগেশন সিস্টেমের গ্রিড ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত সোলার সিস্টেমের যথাযথ ব্যবহার হলে তা সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্রেডার চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সৌর সেচের বিষয়ে ইডকল একটি বিজনেস মডেল তৈরি করেছে। তার ভিত্তিতেই কাজ হচ্ছে। সরকার অর্থায়নও করছে। সোলার দিয়ে সেচের এই বাজার তৈরি করতে আরও সময় লাগবে। অর্থনীতির পাশাপাশি পরিবেশের ওপর ভাল প্রভাব পড়বে। এটি ক্লিন এনার্জি।

তিনি আরও বলেন, সেচের সময় ছাড়া অন্য সময় সেই বিদ্যুৎ গ্রিডে কিভাবে দেওয়া যায় তা নিয়ে স্রেডার পক্ষ থেকে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।