চাঁদপুরে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীর ছড়াছড়ি

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরের পর এবার চাঁদপুরে ব্যাপক সংখ্যক অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীর খোঁজ পেয়েছে জ্বালানি বিভাগ। শিল্প এবং আবাসিকে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী ঢাকা এবং আশেপাশের জেলাগুলোতে রয়েছে বলেই এতদিন জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকে বলা হতো। এই প্রথম ঢাকার বাইরে একটি নির্দিষ্ট জেলার কথা উল্লেখ করা হলো।

জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা একটি বৈঠক করেছি। সেই বৈঠকে চাঁদপুরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ গ্যাস সংযোগের কথা জানানো হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বাখরাবাদ এই এলাকায় গ্যাস বিতরণ করে। তিনি বলেন, আমরা ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোর দিকে নজর দিতে গিয়ে অন্য জেলাগুলোকে সেভাবে আলোচনায় আনিনি। এখন দেখতে পাচ্ছি চাঁদপুরে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির মানুষ অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করছেন।

জানা গেছে  জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে চাঁদপুরের বিষয়টি সামনে আসে। বৈঠকে এসব সংযোগ চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ এসব গ্যাস সংযোগের বিষয়ে জানা গেলেও এখানে কী পরিমাণ অবৈধ সংযোগ রয়েছে তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। চিহ্নিত করা সম্ভব হলেই বলা যাবে কারা এসব অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করছেন।

জানা গেছে, চাঁদপুর থেকে এর আশেপাশের জেলাগুলোতে বিশেষ প্রক্রিয়াতে নির্মিত সিএনজি সিলিন্ডারে করে অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি করা হয়। এসব গ্যাস আশেপাশের গ্যাস না থাকা জেলা গুলোর শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হয়। এক শ্রেণির সিএনজি স্টেশনের মালিকরা এই অবৈধ গ্যাস বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

চাঁদপুরে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই এলাকায় গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্কর মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছিলাম। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত নিয়মিত অভিযান বন্ধ আছে। তবে এখনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অভিযানে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সংক্রমণ কমার পরই আমরা নিয়মিত অভিযান শুরু করবো।

কী পরিমাণ অবৈধ সংযোগ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা ইতোমধ্যে বহু লাইন কেটেছি। তাদের অনেকেই আবার বৈধ সংযোগের জন্য আবেদনও করেছে। আমরা প্রচুর জরিমানাও করেছি।

প্রসঙ্গত, এর আগে দেশের সব গ্যাস বিতরণ কোম্পানির এলাকায় থাকা অবৈধ গ্যাস বিতরণ লাইন অপসারণের জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সব অবৈধ সংযোগে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। সারাদেশের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে জ্বালানি বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি নিয়মিত গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি মনিটর করছে।

প্রসঙ্গত, সরকার এখন এলএনজি আমদানি করে পাইপলাইনে সরবরাহ করছে। উচ্চমূল্যের এই এলএনজি চুরি হওয়ায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সঙ্গত কারণে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিষয়ে সরকার কঠোর হয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিপুল পরিমাণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিতাসের এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাতে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি লাভবান হচ্ছে।