শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে: নসরুল হামিদ

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে। ২০৪১ সালের জ্বালানি চাহিদা সামনে রেখেই কাজ করা হচ্ছে।সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জ্বালানি ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সোমবার (৯ আগস্ট) অনলাইনে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য  বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান, সংসদ সদস্য বেগম নার্গিস রহমান, সংসদ সদস্য মোছা. খালেদা খানম, বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ ও পেট্টোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আব্দুল ফাত্তাহ সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং মূল্যে তিতাস, হবিগঞ্জ, রশিদপুর, কৈলাশটিলা, বাখরাবাদ-এই পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানি হতে ক্রয় করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আনেন। উল্লেখিত ৫টি গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ ২০.৭৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী সে সময় ৫টি গ্যাস ক্ষেত্রের উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদের পরিমাণ ছিল ১৫.৪৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট - যার বর্তমান সমন্বিত গড় বিক্রয় মূল্য প্রায় ৪৯.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফিন্যান্সিয়াল আসপেক্টের  চেয়ে ইকোনোমিকাল আসপেক্ট আরও বেশি। এই গ্যাসের জন্যই শিল্প-কারখানা ও  কর্মসংস্থান সম্প্রসারিত হয়েছে। তাছাড়া ৪৬ বৎসর পরও এই পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র মোট গ্যাস উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ যোগান দিচ্ছে। অর্থাৎ এগুলো এখনও জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অপরিসীম অবদান রেখে চলছে।

তিনি বলেন, বাপেক্স সিলেটের জকিগঞ্জে দেশের ২৮তম গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং, ইআরএল ইউনিট-২, এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, তেল সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রভৃতি চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। তাছাড়া অটোমেশন কার্যক্রম জ্বালানি খাতকে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ব্যবস্থাপনার সাথে সংযুক্ত করবে।

“মুজিব বর্ষে- জ্বালানি খাত, সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাক” প্রতিপাদ্য নিয়ে এবছরের জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উদযাপিত হচ্ছে।

এনার্জি সিকিউরিটি : মর্ডান কনটেক্স, চ্যালেঞ্জ এন্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড' বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক এ এস এম মঞ্জুরুল কাদের। প্যানালিষ্ট হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ম তামিম,  সাংবাদিক অরুণ কর্মকার, এনার্জি ও পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ।

জ্বালানি সচিব বলেন, এ পর্যন্ত আমরা এলএনজি আমদানি করেছি ১১.৫৮ মিলিয়ন টন। এতে আমাদের ভর্তুকি দিতে হয়েছে ৬৩১২ কোটি টাকা। সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে আমরা এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে যাচ্ছি। আগামী মাস থেকে আর স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা হবে না।  তিনি বলনে, সব সময় দেখা যায় জ্বালানির বাজেট কম। কারণ আমরা  নিজস্ব তহবিল থেকে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ফলে বাজেট কম মনে  হলেও কাজ কিন্তু বেশিই হচ্ছে জ্বালানিখাতে।

ম. তামিম বলেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এজন্য নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার করতে না পারলেও পুরানো ক্ষেত্রগুলোর সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে সরবরাহ আমাদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যে হারে গ্যাসের উৎপাদন কমে আসছে তাতে যেকোনও সময় ৪০০-৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যেতে পারে। এজন্য গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি করতে হবে। গ্যাসের বিকল্প হিসেবে তেল আমদানি করা যাবে না।

মঞ্জুরুল কাদের বলেন, আমাদের সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাশ্রয়ী দামে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।