মগবাজার বিস্ফোরণ

তিতাস নিয়ে ক্ষুব্ধ জ্বালানি বিভাগ

মগবাজারের রাখিনীড় ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায় ঢাকার চেষ্টা করেছে তিতাস। এতে তারা সরকারকে বিভ্রান্তও করেছে। এ কারণে তিতাসের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি বিভাগের খোদ সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘তিতাসকে নিয়ে আমি হতাশ।’

গত ২৭ জুন ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে কমপক্ষে ১২ জন মারা যান। আহত হন আরও ৫০ জন। দুর্ঘটনার পর ২৯ জুন তড়িঘড়ি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে তিতাস। সেখানে দুর্ঘটনার জন্য এলপিজিকে দায়ী করা হয়।

মাত্র দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় প্রশ্ন ওঠে। পরে ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানানো হয়।

তিতাসের পক্ষ থেকে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করা হয়েছিল। অভিযোগ ওঠায় পরে বিষয়টি পৃথকভাবে তদন্ত করার জন্য পেট্রোবাংলাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পেট্রোবাংলার তদন্তে তিতাসের গাফিলতি উঠে আসে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিতাসের যে পরিত্যক্ত রাইজার পাওয়া গেছে সেখান থেকে গ্যাস লিকেজ হতে পারে। রাইজার খুলে নেওয়ার পর সেটি সিল করে দিতে হয়। কিন্তু তিতাস রাইজারটি খুলে নিলেও লাইনটি সিল করেনি।

অন্যদিকে দুর্ঘটনার পর ৪ জুলাই ফায়ার সার্ভিস তিতাসকে জানায়, দুর্ঘটনাস্থলের পাশে একটি গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ রয়েছে। তিতাস গিয়ে দেখতে পায় সিটি করপোরেশনের স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ চলছে। সেখান থেকে গ্যাস লিকেজ হচ্ছে। তিতাস তখন লাইনটির সংস্কার করে দিয়ে আসে।

‌তদন্তকারী এক কর্মকর্তা বলেছেন, দুর্ঘটনার পর থেকে তিতাস ওই এলাকায় কয়েকবার গেছে। কিন্তু গ্যাস লাইন লিকেজের খবর অন্য একটি সংস্থার কাছ থেকে তাদের কেন পেতে হলো?

জ্বালানি বিভাগের একাধিক সূত্র বলছে, সচিব ওই সভায় বলেছেন, ‘তিতাস ঘটনার পর পর যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে সরকার বিভ্রান্ত হয়েছে। ইচ্ছাকৃত অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা বেশ খারাপ কাজ বলে আমরা মনে করি।’

জ্বালানি বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তাও বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মগবাজারের ঘটনায় তিতাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তিতাস যে পরিত্যক্ত রাইজার রেখে এসেছিল সেটি সিল করেনি। এ কারণে গ্যাস লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘তিতাস নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ। কাজ করার চেষ্টা করছি। খুব একটা এগোচ্ছে না। বর্তমান এমডি কিছু দিন ভালো কাজ দেখালেও এখন আবার গতি কমে গেছে। উনিও বা কী করবেন। বেশি কিছু করতে গেলে পুরো ইউনিয়ন প্রতিবাদ শুরু করে।’

তিনি বলেন, ‘রাইজার ও লাইনগুলোর মনিটরিং করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। কাজগুলো দায়সারা গোছের হয়ে আসছে।’

এদিকে তিতাসের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পেট্রোবাংলা একটি তদন্ত কমিটি করে। ওই কমিটির প্রধান পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মাইনস) আলী মো. আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি তদন্ত চলছে কিনা বা শেষ হয়েছে কিনা তাও বলতে নারাজ তিনি।

তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তদন্তের বিষয়ে না জানালেও পেট্রোবাংলার একাধিক সূত্র বলছে, জ্বালানি বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পেট্রোবাংলা।