বহু বছরের প্রচেষ্টায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি সই

দেশে প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র তৈরি হতে যাচ্ছে। ঢাকার আমিনবাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩০ একর জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএনইসি)। বুধবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে চীনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চুক্তি হয়েছে। এতে সই করেন পিডিবির সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ এবং সিএনইসি’র তৃতীয় কমপ্লিট প্ল্যান্ট ডিভিশনের ডিজিএম ওয়াং পেংফাই।

আমিনবাজারে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আয়তনের দিক দিয়ে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে প্রতিদিন তিন হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করবে ডিএনসিসি। 

জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ১৮ টাকা ২৯ পয়সা। সিএনইসি কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হলে ঢাকা শহরের একাংশের বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। আমরা শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই। এতে শহরের মানুষকে আরও ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অনুশাসন দিয়েছিলেন, সেই অনুশাসনের ভিত্তিতে এই বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে।

ডিএনসিসির মতো দেশের সমস্ত সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাকে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। তার কথায়, ‘গাজীপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা দক্ষিণেও এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চিন্তা করা হচ্ছে। সারাবিশ্বে গণপরিবহন চলে বিদ্যুতে। আমাদেরও সেই পরিকল্পনা আছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে যাবে। উত্তরা, মিরপুর, পূর্বাচলে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন আবাসিকে নিয়ে বাণিজ্যিকে ব্যবহার করা যাবে না। সেটি করলে সংযোগ কেটে দেওয়া হবে।’

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি সই অনুষ্ঠান

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে একই সুরে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও জ্বালানিতে গণপরিবহন চলবে না। আমরা বিদ্যুৎ দিয়ে চালাতে চাই। চীনের মতো সুন্দর পরিষ্কার শহর বানাতে চাই আমরা। চীনের এই প্রকল্প আমাদের সেই জায়গাটা তৈরি করে দেবে বলে আমরা মনে করি।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী দুই বছরের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।

২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ডিএনসিসি’র মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। কিন্তু দুই দশকের প্রচেষ্টার পর আজই প্রথম বিদ্যুৎ ক্র‍য় চুক্তি সই হলো।