জনপ্রিয়তা হারানোর শঙ্কায় অটোগ্যাস!

নতুন জ্বালানি অটোগ্যাস শুরুতেই বড় ধাক্কা খেতে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধিকেই এজন্য বেশি দায়ী করা হচ্ছে। এখন দেশে পেট্রোল এবং অকটেনে গাড়ি চালাতে যে ব্যয় হচ্ছে তার সমপরিমাণ ব্যয় হচ্ছে অটোগ্যাসে। ফলে অনেকে আর অটোগ্যাসে কনভার্সন করাতে চাচ্ছেন না বলে জানা যায়। কেউ কেউ গাড়ি থেকে অটোগ্যাসের যন্ত্রাংশ গাড়ি থেকে অপসারণও করছেন।

সারাদেশে অটোগ্যাসের পৃথক ফিলিং স্টেশনেও অনেকে বিনিয়োগ করছিলেন। কিন্তু এখন তারাও বিপাকে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, ভবিষ্যৎ বাজার পরিস্থিতি ভালো না হলে তাদের এই বিনিয়োগ উঠে আসা সম্ভব নয়।

মে মাসে অটোগ্যাসের মূল্য ৬২ টাকা ২১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর আগের মাসে ৬৭ টাকা ২ পয়সা, গত মার্চ মাসে এটি ছিল ৬৪ টাকা ৭৮ পয়সা।

জাহাঙ্গীর নামের এক গাড়িচালক বলেন, এখন অটোগ্যাসে আর লাভ নেই। ফলে আমি আর অটোগ্যাসে গাড়ি চালাই না। পেট্রোল-অকটেনের চেয়ে কিলোমিটারে পঞ্চাশ পয়সা সাশ্রয় হয়। এজন্য আর কেউ অটোগ্যাস ব্যবহার করতে চাইছে না। অনেকেই গাড়ি থেকে অটোগ্যাসের যন্ত্রাংশ সরিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলছেন, ৫০ টাকার ওপর উঠে গেলেই অটোগ্যাসে আর কোনও লাভ থাকে না।

সরকারের তরফ থেকে অটোগ্যাসকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এজন্য বিকল্প হিসেবে দেশে প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প গ্রুপকে ৫০০টি অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশন করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। রাজধানী থেকে অনেক দূরেও উদ্যোক্তারা অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশন গড়ে তুলেছিলেন।

জানা যায়, বিস্ফোরক পরিদফতর এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ স্টেশনের লাইসেন্সের অনুমোদন দিয়েছে৷ এখনও বিইআরসিতে জমা আছে ৪০/৫০ টির মতো আবেদন।

সাধারণত হাইব্রিড নয় এমন পেট্রোল এবং অকটেন চালিত গাড়িগুলোতেই অটোগ্যাসে কনভার্সন করা হয়েছিল। দেখা গেছে এ ধরনের একটি ১৫০০ সিসির গাড়ি নতুন অবস্থায় পেট্রোল এবং অকটেনে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে। এতে কিলোমিটার প্রতি খরচ ৮ দশমিক ৯০ টাকা। (প্রতি লিটার অকটেনের দাম ৮৯ টাকা)। পেট্রোলে খরচ আরও ৯০ পয়সা কম। অন্যদিকে এক লিটার অটোগ্যাসে ১৫০০ সিসির একটি গাড়ি অতিক্রম করে সাড়ে সাত থেকে সর্বোচ্চ আট কিলোমিটার। সাড়ে সাত কিলোমিটার অতিক্রম করলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ে ৮ টাকা ২৬ পয়সা। অন্যদিকে অটোগ্যাসে গাড়ি চালালে ইঞ্জিন  দ্রুত নষ্ট হওয়াতে সারানোর জন্য খরচ বাড়ে। এসব বিবেচনাতে কেউ এখন আর অটোগ্যাস ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছে না।

বছর দুই আগেও পেট্রোল এবং অকটেনের তুলনায় অটোগ্যাসকে সাশ্রয়ী হিসেবে দেখা হতো। তখন অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি অটোগ্যাসে রূপান্তর করতে শুরু করেছিল। সরকার ক্রমান্বয়ে সিএনজির বিকল্প হিসেবে অটোগ্যাসকে বিবেচনা করছিল। কিন্তু এখন পেট্রোল অকটেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না অটোগ্যাস।

প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম ৪৫ টাকা হলে ১৫০০ সিসির একটি গাড়ির প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয় ৬ টাকা। অর্থাৎ গাড়িটি প্রতি কিলোমিটারে আড়াই থেকে তিন টাকা সাশ্রয় করতে পারে। এরফলে যদি একটি গাড়ি দৈনিক ৫০ কিলোমিটার চলে তাহলেও ১০০ টাকা সাশ্রয় হয়। আবার ভাড়ায় চালিত গাড়িগুলো আরও বেশি সাশ্রয় করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, এটা সত্যিই খুব শঙ্কার কথা। যদিও অটোগ্যাসের এই দাম বৃদ্ধি সাময়িক সমস্যা। তাও আমাদের এই খাতে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। এই মুহূর্তে গ্রাহক যদি অটোগ্যাস রেখে আবার তেলে চলে যায় তাহলে আমাদের বিনিয়োগের কী হবে? এসব বিবেচনা করা উচিত সরকারের।  পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা ফান্ড থেকে সাময়িক সময়ের জন্য এই খাতে ভর্তুকি দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাও করা যায় কিনা তা ভাবা উচিত।

এই বিষয়ে বিইআরসির এক সদস্য বলেন, প্রথম দায়িত্ব ছিল এলপিজি ব্যবসায়ীদের। এই খাতে যে ভ্যাট  ধরা হয়েছে তা কমানোর বিষয়ে বাজেটের আগেই আলোচনা করার দরকার ছিল। পাশাপাশি এবং ট্রান্সপোর্টেশন কস্ট কমালে দাম আরও কিছুটা এমনিতে কমে আসবে। এতে শঙ্কা মোকাবিলা সহজ হতো। কিন্তু তারা তা না করে এখন ভর্তুকির কথা বললে এখন তা করা সম্ভব কিনা তাও তো বিবেচনা করতে হবে।

এদিকে অন্য এক সদস্য জানান, দাম বাড়তে শুরু করায় শহর এলাকার অনেক জায়গায় গ্রাহক এলপিজি কেনার আগ্রহ হারাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ জায়গায় বাধ্য হয়ে এলপিজি কিনছেন অনেকে। সবার চেয়ে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বিকল্প উপায় খুঁজছেন অনেকে।