‘দেশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি সংকট থাকতে পারে’

যুদ্ধ-পরিস্থিতির কারণে দেশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি সংকট থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ঘাটতি আছে ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। জ্বালানি সাশ্রয় করা গেলে এটি ৫০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা সম্ভব।’

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি সংকট সমাধান বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমাতে অফিস সময়ও কমিয়ে আনার কথা ভাবছে সরকার। আবারও চালু হতে পারে হোম অফিস। সমাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সবাইকে জ্বালনি সাশ্রয়ের আহ্বান জানান তিনি।

তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘পিক আওয়ারে ২ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা কমানো গেলে লোডশেডিংয়ের চাপ নাও থাকতে পারে।’

গ্রাম ও শহরে লোডশেডিং বণ্টনে ন্যায্যতা আনা কঠিন। গ্রামের মানুষকে ভুগতে হবে বেশি বলেও জানান তিনি।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের পর ভারত থেকে আমদানি করা কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এস আলম গ্রুপের বাঁশখালীর বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন কমে এলেও সমস্যা হবে না। এই তিনটা কেন্দ্র থেকে গড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। শুধু এলএনজি দিয়ে সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সব দেশ বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এখন জ্বালানি সংকট হচ্ছে। জাপান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ এখন জ্বালানি সাশ্রয়ে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা এর বাইরে নই। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। আমরা যুদ্ধের মধ্যেই অবস্থান করছি। এই সংকট মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হবে। সন্ধ্যা ৭টার পর বিয়ের অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান না করা, এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রিতে রাখা, মসজিদেও নামাজের সময় ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।’

তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে এলএনজি ও তেলের দাম এখন অনেক বেশি। এলএনজির দাম এখন প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট ৪১ ডলারে উঠেছে। ডিজেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৭৭ ডলারে উঠেছে। এমনিতেই আমরা এই খাতে ভর্তুকি দিচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের পক্ষে আরও বেশি ব্যয় করা কঠিন। অন্যদিকে সাশ্রয় করা গেলে এই ব্যায়ের প্রয়োজন নেই। তবে এই পরিস্থিতি কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ জানে না। আমরা সাশ্রয়ের তালিকা তৈরি করছি। এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গ্রাম ও শহরের লোডশেডিংয়ের বৈষম্যের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি এত সহজ নয়। কোনও কোনও গ্রামে শুধু মানুষের বাস, আবার কোথাও শিল্প কারখানা আছে; এ সব বিষয় বিবেচনা করে স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে ম্যানেজমেন্ট করা হবে। এটি ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা দেখতে কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটি কাজ করছে। এছাড়া গ্রাহকদের আগে থেকে লোডশেডিং জানানো সম্ভব নয়। তবে আগের দিন একটা আভাস দেওয়া যেতে পারে। সেই তালিকা করাও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে জ্বালানি সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছি। এই মুহূর্তে কোনও রিগ (খনন-যন্ত্র) বসে নেই। তবে রাতারাতি গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়। আগামী বছরের শুরুতে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আমরা আশা করছি।’