সৌরবিদ্যুতের বহুবিধ ব্যবহার সম্পর্কে জানে না সাধারণ মানুষ

প্রচারের অভাব, সহজপ্রাপ্য না হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা ভাঙতে না পারার কারণে ছোটখাটো কাজে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু হচ্ছে না। এখন বাজারে সৌর চার্জার ফ্যান, সৌর বাতি এমনকি সৌর মোবাইল চার্জারও পাওয়া যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ এগুলো ব্যবহার করে না, এমনকি জানেও না। সরকারের টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (স্রেডা) বিষয়গুলো প্রচার করে না। বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকেও কোনও প্রচারণা নেই। তবে পাওয়ার সেলের কর্মকর্তারা বলছেন, এগুলো জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা একটি খাতের উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ধরা যাক দেশের সব মোবাইল ফোন যদি সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ দেওয়া যেতো তাহলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতো। কিন্তু এ ধরনের ডিভাইসের ব্যবহার খুবই বিরল। সরকারি আদেশ জারি করেও এটি করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা।9c33f517e9a40dc31c6859bfbb060346-60a799d07c3a0

এখন বাজারে সোলার কুকার, সোলার ওয়াটার হিটার, সোলার লাইট, ফ্যান এমনকি মোবাইল চার্জারও পাওয়া যায়। দেশেও কোনও কোনও উদ্যোক্তা এ ধরনের পণ্য আমদানি করছেন। তবে বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে না। সঙ্গত কারণে চাহিদা তৈরি না হওয়ায় এগুলো থেকে যাচ্ছে অপ্রচলিত পণ্যের তালিকায়। কেউ কেউ শখ করে ব্যবহার করলেও ব্যাপক প্রচলন নেই।

নবাবপুর মার্কেটে সোলার ফ্যান বিক্রি করে ‘মা ইলেকট্রনিক্স’। দোকানের মালিক সোলাইমান বলেন, সোলার ফ্যানের দাম তুলনামূলক বেশি। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হয়। এসব কারণে গ্রাহক আগ্রহ হারায়।

সোলারের এসব ছোটখাটো জিনিস যারা বিক্রি করেন তারা জানান, সোলার দিয়ে ফ্যান বা যন্ত্রাংশ চালাতে হলে ঘরের বাইরে সোলার প্যানেল স্থাপন করতে হয়। সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে ধরে রাখতে হয়। এরপর ওই বিদ্যুৎ দিয়ে যন্ত্রাংশ চালাতে হয়। এতে বিদ্যুৎ বিল বাবদ অর্থ খরচ না হলেও প্রথমেই কোনও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস চালাতে হলে তুলনামূলক ব্যয়বহুল স্থাপনার প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ সোলার ও রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপাল বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আবাসিকের ছোটখাটো সব কাজেই আমরা সোলার জনপ্রিয় করে তুলতে পারি। মোবাইল চার্জ দেওয়া, রান্না করা, ফ্যান ও লাইট জ্বালানো, পানি তোলা, পানি গরম করাসহ বেশ কিছু কাজেই সোলার ব্যবহার করা যায়। কেউ কেউ এটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবহার করলেও পণ্যগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে না। কারণ, এর প্রচার নেই। সরকারও এসব জিনিসের ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখায়নি এখন পর্যন্ত।  তবে বর্তমান সংকট মোকাবিলায় যে লোডশেডিং করা হচ্ছে সেটি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব এসবের ব্যবহার বাড়িয়ে। তিনি বলেন, এসব পণ্য জনপ্রিয় করতে সচেতনতার পাশাপাশি প্রচার প্রয়োজন।  এছাড়া সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। সোলারের পণ্যে প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে, শুল্ক কমিয়ে আনা যেতে পারে, গণমাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে ব্যবহার উৎসাহিত করতে।

এদিকে সরকারি অফিস ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার সংক্রান্ত সমন্বিত যে গাইডলাইন রয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী অন্তত তিনভাগ বিদ্যুৎ সোলার প্যানেল বসিয়ে উৎপাদন করতে হবে।

কিন্তু কেউ এই নীতিমালা মানছে না। গাইডলাইনের ধার ধারছে না। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর গাইডলাইনটি স্রেডা থেকে প্রকাশ করা হয়। তবে এই গাইডলাইন প্রকাশের পর সৌর প্যানেল স্থাপন বেড়ে গেছে বিষয়টি এমন নয়।

নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করতে হয়। কিন্তু রাজধানীতে এসব সোলার প্যানেলের বেশিরভাগ সংরক্ষণের অভাবে পড়ে থাকে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সৌরবিদ্যুৎ বাধ্যতামূলক হওয়ার পর বেসরকারি বাসাবাড়ির ক্ষেত্রে জোর করে হলেও বিতরণ কোম্পানিগুলো সৌর প্যানেল বসিয়েছে। কিন্তু সরকারি ক্ষেত্রে তো আর এই জোর করার সুযোগ নেই। সরকারি ভবনগুলোর ছাদে কত শতাংশের সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত কোনও হিসাব আমাদের কাছে নেই।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, সরকারি যেসব বড় জায়গা রয়েছে সেগুলোর ওপর সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা অনেক পুরানো। এর আগে ২০১৪-১৫ সালে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ঠিক করা হয়, রেলস্টেশন, বড় মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্যানেল বসানো হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ একা চাইলে বিষয়টি সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কেও চাইতে হবে। আবার এক্ষেত্রে বিজনেস মডেলও ঠিক করতে হবে। তখন এসব নিয়ে বেশ তোড়জোড় হলেও এরপর সব থেমে যায়। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সংকটের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি যতটা আলোচনায় আসছে, নিকট অতীতে তা ছিল না। কারণ, চাহিদার চাইতে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল আমাদের।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বলেন, সোলারের অনেক যন্ত্রপাতি অনেকেই নিজেদের উদ্যোগে ব্যবহার করছেন। এগুলো ব্যাপক আকারে ব্যবহার করলে আবাসিকে বিদ্যুতের লোড কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষে স্রেডা (টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সোলার নিয়ে কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করবো স্রেডার মাধ্যমে এগুলো জনপ্রিয় করা যায় কিনা। এই বিষয়ে আলোচনা করবো আমরা।