রাজধানীর কিছু এলাকায় দিনে গ্যাস থাকে না

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দিনের বেলায় চুলায় গ্যাস না থাকার অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, কোনও কোনও এলাকায় বছরখানেক ধরে এই সমস্যা চলছে এবং দিনে দিনে এই সংকট আরও  বাড়ছে। দিনের বেলায় চুলায় গ্যাস না থাকায় রাতে অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় গৃহিনীরা।

রবিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুর, ডেমরা, বনশ্রী, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

ডেমরা বামুইল এলাকার বাসিন্দা আসমা আক্তার জলি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রায় একবছর ধরে দিনের বেলা গ্যাস সংকটে আছেন তারা। তিনি বলেন, ‘দিনের বেলা একেবারেই গ্যাস থাকে না। মাঝে মাঝে দুপুরে দিকে হালকা গ্যাস আসলেও রান্নার জন্য তা যথেষ্ট না। গ্যাস আসে রাত ১০ টার পর। আবার ভোর ৬টার মধ্যে চলে যায়।’

দিনে গ্যাস না থাকায় রাতে কাজের চাপ থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দিনে গ্যাস থাকে না বলে রাতেই চেষ্টা করি দিনের রান্না একবারে করে রাখতে। সেই রান্না আবার শেষ হতে হতে  ১২টা-১টা বেজে যায়। আবার দেড়ি করে ঘুমাতে যাবার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। সময় মতো নামাজ পড়া যায় না।’

জলি আরও বলেন, ‘মেয়েটা সকালে কলেজে যায়, তাই সকালের নাস্তা বানানোর তাড়া থাকে। তখন আবার গ্যাস চলে যায়। প্রায়ই নাস্তা বানানো সম্ভব হয় না।’

একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হয় মন্তব্য করে জুরাইন এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী মানসুরা আক্তার বলেন, ‘উপায় নাই। দিনে গ্যাস আইবো এটার কোনও নিশ্চয়তা নাই। রাতের বেলায় সব রান্না কইরা রাখি। সেইটা সিলিন্ডারে গরম কইরা কইরা খাই। না-হলে তো কুলানো যায় না।’

দিনের বেলা হালকা গ্যাস আসে। কিন্তু তা রান্নার জন্য যথেষ্ট না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে গ্যাস আসে তাতে খাবার গরম করতে অনেক টাইম লাগে। দুপুরে তো বাসার লোকদের কাজে ফেরত যাওয়ার তাড়া থাকে। তাই ওই গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করা যায় না।’

গ্যাস না থাকায় রান্নায় দ্বিগুণ খরচ হয় বলে জানান মিরপুরের বাসিন্দা নাজনিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘দিনের বেলা গ্যাস থাকে না। রাতে তিন বেলার রান্না কইরা রাখি। মাঝে মাঝে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য রাতে গ্যাস আসার অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু আমার পক্ষে এভাবে সব সময় সম্ভব হয় না। তাই বাসায় সিলিন্ডারও রাখছি। বাচ্চারা স্কুল থেকে আইসা একবেলার রান্না আরেক বেলা খাইতে চায় না। ওদের জন্য সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়। একদিকে গ্যাসের লাইগা সরকারকে টাকা দেই, আবার সিলিন্ডারেও টাকা দেই। ডাবল খরচ হইতাছে।’

গ্যাস সংকটের বিষয়ে তিতাসের পরিচালক (অপারেশন)  মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন সারাবিশ্বেই জ্বালানি সংকট। আমরা এর বাইরে না। এলএনজি আমদানি সংকটের কারণে তিতাসের অধীন এলাকায় যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার কথা, তা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কিছু কিছু এলাকায় গ্যাস সংকট হচ্ছে। এই সংকট সাময়িক। সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’ আগামীতে এই সংকট কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।