ভারত থেকে এলএনজি আমদানিতে পাইপলাইন নির্মাণের কাজও চায় এইচ এনার্জি  

ভারত থেকে বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহের পাশাপাশি পাইপলাইনও নির্মাণ করতে চায় এইচ এনার্জি। ভারতীয় এই কোম্পানিটি বাংলাদেশে আমদানি করা এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর ও সরবরাহ করবে। এ জন্য ২০২১ সালে ৯ ডিসেম্বর এইচ এনার্জির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। কিন্তু কোম্পানিটি পাইপলাইন নির্মাণের দাবিতে অনড় থাকায় ভারত থেকে গ্যাস আমদানির প্রকল্প আটকে আছে।

উল্লেখ্য, দেশের আইন অনুযায়ী সরকার নিজেই গ্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করে থাকে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশ অংশে পেট্রোবাংলার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএলের পাইপলাইন নির্মাণ করার কথা, যার খরচও বাংলাদেশ বহন করবে। কিন্তু এইচ এনার্জি নিজস্ব বিনিয়োগে পাইপলাইন নির্মাণ করতে চাইছে।

পেট্রোবাংলা বলছে, পাইপলাইন নির্মাণের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, এইচ এনার্জি তা পেট্রোবাংলার নামে অধিগ্রহণ করে দিতে সম্মত রয়েছে। তবে পাইপলাইন নির্মাণের দাবি তারা ছাড়তে চাইছে না। ফলে প্রকল্পটি আটকে রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস পাইপলাইন যে কোম্পানি নির্মাণ করবে, তারাই এর হুইলিং চার্জ নেবে। এখানে হুইলিং চার্জের ব্যবসাটি এইচ এনার্জি ছাড়তে চাইছে না। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, সরকার নিজেই পাইপলাইন নির্মাণ করে এবং সরকারি কোম্পানি জিটিসিএল এখান থেকে হুইলিং চার্জ গ্রহণ করে থাকে। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে গেলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

ভারত থেকে প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের চুক্তি রয়েছে এইচ এনার্জির সঙ্গে পেট্রোবাংলার। এই গ্যাসেই খুলনায় নির্মাণাধীন রূপসা ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চলার কথা রয়েছে। কেন্দ্রটির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের জুন মাসে এলএনজি আমদানির জন্য ভারতের হিরানন্দানি গ্রুপের কোম্পানি ‘এইচ এনার্জি’র সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করে পেট্রোবাংলা।

দেশে বর্তমানে তিন ভাগের একভাগ গ্যাস এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে ৮৫০ মিলিয়ন এলএনজি থেকে সরবরাহ হচ্ছে। সরকার কাতার এবং ওমান থেকে স্থায়ী চুক্তিতে এলএনজি আমদানি করে।

ভারত থেকে এলএনজি আমদানি করা হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সংকটের সমাধান হবে। ভারত আগে থেকেই বাংলাদেশে তেল ও বিদ্যুৎ রফতানি করে আসছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাতক্ষীরা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করার কথা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল)। পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। এই পাইপলাইন নির্মাণে প্রকল্পের রুট জরিপের কাজও করেছে জিটিসিএল।

সরকার এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি কেনার চেষ্টা করছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সঙ্গে আরও একটি স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বাইরে পায়রাতে একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।