প্রতি বছর যদি ৫-৬টি গ্যাস ক্ষেত্রের অনুসন্ধান চালানো হয় তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে গ্যাস সম্পদ বা গ্যাস জ্বালানির অভাব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার চাই' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
আলোচনা সভায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, ‘দেশে জ্বালানি সংকটের যে বিকল্প, তাতে আমরা নজর দিই না। এর বিকল্প হলো, নিজের দেশের সম্পদের দিকে তাকানো। বাংলাদেশের মাটির নিচে প্রচুর ভূ-সম্পদ রয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিশ্চিত করেছে দেশে কী পরিমাণ গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য যেসব দেশের গ্যাসের সম্ভাবনা আমাদের মতো, তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কারণ, তারা আমাদের মতো মাটির নিচে সম্পদ রেখে আমদানিতে ঝুঁকে যায়নি। সাগরের তলদেশে জ্বালানির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারছি না। অতীত থেকে বর্তমান, কোনও সরকারই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানের হার প্রতি বছরে একটা। এটা খুবই নিম্নমানের। এটা কোনও জোরালো অনুসন্ধানের ধারে -কাছেও নাই। সাগর বুকে আমরা এখনও একটা কূপও খনন করিনি। প্রতি বছর যদি ৫-৬টি করে গ্যাসের অনুসন্ধান চালানো হয় তাহলে আমার মতে পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে গ্যাস সম্পদ বা গ্যাস জ্বালানির অভাব থাকবে না।’
এতে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ।
সভায় জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার নিশ্চিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে যেসব দাবি উত্থাপন করা হয়
সৌর তথা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন আইপিপি মডেলে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নয়। না লাভ না ক্ষতির নীতিতে উন্নয়ন হতে হবে; সরকারকে এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট মেয়াদে ভর্তুকি দিতে হবে; কৃষি ও গ্রামীণ পরিবহনে মাছ চাষ ও সেচ, পশু-পাখি পালন ও হালকা পরিবহনে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত হতে হবে; নিরপেক্ষ/স্বাধীন পক্ষকে দিয়ে পরিবেশগত প্রভাব নিরীক্ষণ (ইআইএ) করাতে হবে। এখানে বিইআরসি, ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতিনিধি থাকতে হবে; মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ হতে হবে; প্রশাসনের বাইরে অংশীজন প্রতিনিধি সমন্বয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি/কমিশন দ্বারা জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিরোধ/অসন্তোষ নিষ্পত্তি হতে হবে; জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন, ১৯৯৫ যথাযথভাবে প্রতিপালিত হতে হবে এবং অন্যথায় বাধ্যতামূলক আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হতে হবে।
শুধু আবাদ-অযোগ্য জমি ব্যতীত অন্য কোনও জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে না, তা বিধি দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে; জ্বালানি রূপান্তরে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতাহীন কোনও বিনিয়োগে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। তাই দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ অবিলম্বে বাতিল হতে হবে; স্রেডা আইন ২০১২-এর ৬(১৭) উপধারা অনুযায়ী সৌর তথা নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের মূল্যহার বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত হতে হবে; জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিইআরসি আইনের সংশোধনী বাতিল করে গণশুনানির ভিত্তিতে সকল পর্যায়ের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে; এবং ৫ শতাংশের চেয়ে কম পরিমাণ জমিতে বসবাসকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বাস্তুচ্যুত করা হলে সরকারের দায়িত্বে অন্যত্র সমপরিমাণ জমিতে তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় মূল বক্তব্য প্রদান করেন জ্বালানি বিষয়ক সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুইয়া প্রমুখ।