শেয়ার বাজারে বড় ধস, একদিনে হাওয়া ১৫ হাজার কোটি টাকা

এক সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরা। আতঙ্কে তারা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন। যার ফলস্বরূপ দিনের লেনদেন শেষে বড় ধসের ঘটনা ঘটেছে দেশের শেয়ার বাজারে। এই ধসের মধ্যে পড়ে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনেই ১৫ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে।

রবিবার (৪ মার্চ) শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই দেশজুড়ে এক সপ্তাহের লকডাউনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৮৫ পয়েন্ট পড়ে যায়।

শেয়ার বাজারে দেখা দেওয়া এই বড় দরপতনের মধ্যেই এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানান, লকডাউনের মধ্যেও শেয়ার বাজারে লেনদেন বন্ধ হবে না। ব্যাংকের লেনদেনের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে শেয়ার বাজারে লেনদেন চলবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন আশ্বাসও বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক দূর করতে পারেনি। ফলে শুরুর বড় দরপতনের ধারা চলমান থাকে। এর মধ্যেই দুপরে লকডাউন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এই প্রজ্ঞাপন জারির পর শেয়ার বাজারে দরপতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ বাড়ালে অনেক কোম্পানির ক্রেতা সঙ্কট দেখা দেয়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সূচকের ওপরে। ফলে দেখতে দেখতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় দুশ পয়েন্ট নেই হয়ে যায়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বেড়েছে মাত্র ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। আর ৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। যা আগের কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ছিল ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৫ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।

বড় অঙ্কের বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে গত বছরের ৯ মার্চের পর সূচকটির সব থেকে বড় পতন হল।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৮২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০১ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিকে সূচকের বড় পতনের দিনে ডিএসইর লেনদেন হয়েছে ৫২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৬৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

অপর শেয়ার বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৪২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৪টির। আর ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।