টানা তিন সপ্তাহ ধরে মন্দা শেয়ার বাজারে

শেয়ার বাজারে ১০ অক্টোবর থেকে দরপতন শুরু হয়েছে। টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলছে মন্দাভাব। এতে বাজার থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। টানা এ পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ভর করেছে। সর্বশেষ সপ্তাহেও দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বড় অংকের মূলধন হারানোর পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি।

বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মন্দার মধ্য দিয়ে আগের দুই সপ্তাহ পার করে দেশের শেয়ার বাজার। আগের দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে টানা তিন সপ্তাহের পতনে ১৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে মূলধন হারালো ডিএসই।

গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন কমলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে যায়।

তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচক কমেছিল ১৬৭ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ৯৯ দশমিক ৭০ পয়েন্ট। অর্থাৎ টানা তিন সপ্তাহের পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ২৭৯ পয়েন্ট।

বাজারের তথ্য বলছে, প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গেল সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩৮ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচক কমেছিল ৪৯ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ২৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট।

বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা পতনের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৬০ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে এই সূচক কমেছিল ১৯ দশমিক ৮০ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ৪৮ দশমিক ২৫ পয়েন্ট।

এদিকে তথ্য বলছে, সূচক ও বাজার মূলধন কমলেও গেল সপ্তাহে ডিএসইতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। কমেছে ১৫৫টি শেয়ারের দাম। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দাম।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫১০ কোটি ২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৭৩ লাখ টাকা।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ৫৫০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬ হাজার ৪৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৫০৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। মোট লেনদেন বাড়ার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) ছুটির কারণে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৩৯ কোটি ৯২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।