শেয়ার বাজারে অস্থিরতা কাটছে না

ক্রেতা নেই অধিকাংশ শেয়ারের। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ। কারণ, কোনও শেয়ারের দর যখন একটু বাড়ছে, তখনই লোকসানে বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার ক্রেতা সংকটের কারনে সে সুযোগও পাচ্ছেন না অনেকে। অনেকের লোকসান এতটাই বেড়েছে যে, তারা এখন আর বিক্রির চিন্তাও করতে পারছেন না। বাজারের তথ্য বলছে, ঈদের পর টানা তিন সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমেছে ২৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

এদিকে শেয়ার বাজারের চলমান দরপতন ঠেকাতে আবারও ফ্লোর প্রাইস (দরপতনের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সই করা এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা আগামী রবিবার (৩১ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে।

বিএসইসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী, ফ্লোর প্রাইসের দর নির্ধারণ করা হবে সর্বশেষ ৫ দিনের ক্লোজিং প্রাইসের ওপর ভিত্তি করে। ফলে রবিবার থেকে সিকিউরিটিজের দর স্বাভাবিক হারে ওঠানামা করতে পারবে। তবে ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না। কোম্পানির বোনাস শেয়ার বা রাইট শেয়ারের কারণে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সিকিউরিটিজের দর সমন্বয় হবে। আর নতুন শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রথম দিনের লেনদেনের ক্লোজিং প্রাইসকে ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এদিকে গেলো সপ্তাহে শেয়ার বাজারে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই বড় দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচক। এতে এক সপ্তাহেই প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১১ হাজার কোটি টাকার কমে গেছে।

তথ্য বলছে, ঈদের পর এখনও পর্যন্ত শেয়ার বাজারে ১৩ দিন লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১১ দিনই পতন হয়েছে শেয়ার বাজারে। এভাবে টানা পতনের মধ্যে পড়ে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৩ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৬ কোটি টাকা। আগের দুই সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমে ১৫ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে টানা তিন সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯৭টির। আর ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এর ফলে গত সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৬ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৯৭ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ৪২ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গেলো সপ্তাহে কমেছে ৫৫ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৭৩ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ১৯ দশমিক ৯২ পয়েন্ট।

প্রধান ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহ পতন হয়েছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকেরও। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ৩৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩২ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ১০ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবকটি সূচকের পতন হলেও গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

এছাড়া গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ১৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭৭০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯৪ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।