ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু থেকেই বলা যায় নির্বাচন কমিশন নিজেদের শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন তাদের কথা শুনছেন না। এমন অজুহাত যেমন ছিল, তেমনি প্রকাশ্যে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট শুরুর আগে ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারে ভরে যাওয়া এবং হতাহতের ঘটনার পরেও নির্বাচন কমিশন বলেছে- ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তৃতীয় দফা নির্বাচনে ভোটের মাঠে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাত ব্যবহার করতে হয়েছিল। ওই দফায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও কারচুপি দখল ও ব্যালট বাক্স ভরার ঘটনা ঘটেছে আগের মতোই। আসলে পুরো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশনের এক অসহায় রূপ দেখা গেল। তবে নির্বাচনের এই কুৎসিত রূপ দেওয়ার দায় কেবল নির্বাচন কমিশনের নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এর দায় নিতে হবে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এবং বিরোধীদল উভয় দিকেই মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। তবে বরাবরের মতোই দায় ক্ষমতাসীন দলের দিকেই বেশি যায়। তারা চাইলে তৃণমূলের সুপারিশকে শ্রদ্ধা জানাতে পারতো। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার লোভ সংবরণ করা যেতো। তারা সেই লোভ সংবরণ করতে পারেনি। বিরোধী দল তৃণমূলকে সংগঠিত করে সরকারি দলকে মোকাবেলা করতে পারেনি। তাদের তৃণমূলের সংগঠনকে গোছাতে না পারার ব্যর্থতাও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রক্তাভ চেহারার জন্য দায়ী।
আরও পড়তে পারেন: গণমুখী বাজেট, গণবিরোধী বাজেট!
রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ইতিবাচক সুযোগটি হারিয়েছে। পৌর নির্বাচনে যেমন এর ফায়দা নিতে পারেনি, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাই হয়েছে। অথচ এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে সংগঠিত করার সুযোগ ছিল। তৃণমূলে সরকারি ও বিরোধী দলের বিভক্তি ছিল বরাবরই। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরনির্বাচনের কাউন্সিলর পদে খানিকটা ব্যক্তি ও এলাকা ইমেজ কাজ করতো অবশ্য। কিন্তু ভোটে দুটি পক্ষ স্পষ্টই থাকতো। সেই বিবেচনায় দলীয় প্রতীক দিয়ে সেই আনুষ্ঠানিকতা বা সত্যায়িত সীলমোহর দেওয়া হয়। তৃণমূলের মানুষেরা বলছেন-
বলছেন- বিভেদ, সংঘর্ষ তাদের উঠোনে, পারিবারিক বৈঠকখানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামাজিক সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ হতে শুরু করেছে তৃণমূলে।
তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের। তাদের দলের অভ্যন্তরে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এই বিভেদ কেবল তৃণমূলে আটকে নেই। কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যার ফলাফল কখনও জাতীয় নির্বাচন হলে সেখানে দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনেরতো সর্বস্বই গেছে। তারা ব্যবহৃত হতে হতে নিজস্বতা রক্ষা করতে পারেনি।
সবকিছুর পরও বলতে ইউনিয়ন পরিষদ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমেরও তৃণ ভিত্তি। তাই চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে যারা নির্বাচিত হয়ে এলেন সবশেষে তাদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে যে যেই পরিচয়েই নির্বাচিত হয়ে এলেন, তাকে সরিয়ে রেখে তৈরি করতে হবে উন্নয়ন বান্ধব পরিবেশ। যদি না পারা যায়, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ নামের প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হবে না।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি