X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিউমার্কেট ঘেরা সংকট

তুষার আবদুল্লাহ
২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৮:০২আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৮:০২

তুষার আবদুল্লাহ পৃথিবীর সুন্দরতম মার্কেট ঢাকার নিউমার্কেট– এই ধারণা আমার ব্যক্তিগত। দেশজুড়ে কত বিপণি বিতান তৈরি হলো, আমিও ভিনদেশের কত বিখ্যাত বিপণি বিতানে ঢুঁ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি; কিন্তু ঢাকার নিউমার্কেটের কাছে যেন সেসব জৌলুস ম্লান।

মায়ের হাত ধরে নিউমার্কেটের দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়ানো, বারান্দা ও মার্কেটের ভেতরের সড়কে হাঁটা, হাকসা স্টুডিওতে ছবি তোলা, বইয়ের দোকানে গেলে বের না হওয়ার ইচ্ছে, বই হাতে অলিম্পিয়ায় গিয়ে পেটিস ও ক্রিমরোল খাওয়ার স্মৃতি আজও জ্বলজ্বল করে আমার মনে।

সেদিন নিউমার্কেটের উত্তরের গেটের পত্রিকার দোকানে গিয়ে দেশ পত্রিকা কিনতে গিয়ে দেখি, বাইরের ফুটপাতের উলের দোকান উঠে গেছে। সেখানে আর্বজনা ও গাড়ির পার্কিং। বইয়ের দোকানে মজার বই, আনন্দের বইয়ের সংখ্যা কমে বিদেশ যাত্রা ও চাকরির বইতে ঠাসাঠাসি। ভেতরের কাঁচা ছোলার স্বাদ আগের মতো থাকলেও বইয়ের দোকানকে ঘিরে সামনের খোলা জায়গার আড্ডা কমে গেছে।

ঘড়ির দোকানগুলো বলছে সময় বদলেছে। নিউমার্কেটকে ঘিরে গড়ে ওঠা মার্কেটগুলো কেমন যেন চরিত্র পাল্টে ফেলেছে ঠিকই। গাউসিয়া, চাঁদনী চক, নূর ম্যানসনে না গেলে ঈদ যেন একসময় পূর্ণতা পেতো না। চাঁদরাতেও যেন কত কাজ জমা থাকতো এসব মার্কেটের কসমেটিকস ও দর্জিবাড়িতে। দোকানিরা চেনা ছিল। শৈশব থেকে দেখা। হকার্স মার্কেটের কোণের দোকানটি এখনও আছে। তবে সেখানে ডাল-বেসনে ভাজা ফুল্লরী কিংবা ছোট টিক্কার দাম এখন আর ২ টাকা নেই। বেড়েছে। তবুও জলদি খেয়ে নেওয়া যায় এমন খাবারের তালিকায় এখনও ওই দোকানকেই সামনে এগিয়ে রাখি। এই যে এত যাওয়া-আসা, ধীরে ধীরে লক্ষ্য করছিলাম মার্কেটের দোকান মালিক-কর্মচারীরা কেমন কর্কশ হয়ে উঠছে। মেয়েদের সঙ্গে ব্যবহারে অশোভন আচরণ বেড়েই চলছিল।

গণমাধ্যমে কাজ শুরুর পর বেশকিছু অভিযোগ আমার কাছেও আসে। মালিক সমিতির কাছে অভিযোগ জানিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি। তখন থেকে বুঝতে পারি– মূল্যহ্রাসের দীর্ঘ ব্যানারে আড়ালে যেমন প্রতারণা লুকানো, তেমনি টাকা দিয়ে ক্ষমতা ও দাপট কিনে রেখেছে তারা।

গত কয়েক দশকে নিউমার্কেটে ব্যবসায়ীদের ঘনত্ব বেড়েছে যেমন, তেমনি বিশৃঙ্খল হয়েছে। এখন নিউমার্কেটে স্মৃতি সড়ক ধরে হাঁটতে গিয়ে সেই প্রশান্তি ও উদারতা পাই না। মেয়েকে স্মৃতি থেকে যা বলি, মেয়ে বর্তমানের সঙ্গে তার মিল খুঁজে পায় না। আশেপাশের মার্কেটগুলো অপরিকল্পিতভাবে হওয়ায়, একরকম ঘিঞ্জি অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে অরাজকতাও।

দুই-একবার একা ঘুরতে গিয়ে দেখেছি– দাম আগের মতোই আকাশ-কুসুম চায় দোকানি-কর্মচারীরা। আগে সেই চাওয়ার মধ্যে কৌতুক ছিল। আন্তরিকতা ছিল। এখন সেখানে রূঢ়তা বেশি। ক্রেতার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। দরকারও নাকি নেই। কারণ ক্রেতা প্রতিবাদী হলে, ঢাল-তলোয়ার কেনা আছে! সপ্তাহ, মাস হিসাবে বখরা নিয়ে যায় তারা। ইশারায় তারাই এসে দাঁড়াবে।

প্রশাসন না হয় চুক্তিবদ্ধ হতে পারে, তাই বলে আশেপাশের বিদ্যায়তনও? সাধারণ শিক্ষার্থীরা নয় অবশ্য। ব্যানারের নিচে অবস্থান যাদের তারা। অবশ্য বিদ্যায়তনের নিজস্ব তাপ সবসময়ই শিক্ষার্থীরা উপভোগ করতে গিয়ে যেখানে-সেখানে উত্তাপ ছড়িয়ে দিতে চায়। শিক্ষার্থী মাত্রই এই বদনাম আছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট এবং আশপাশের বিপণি বিতানে গিয়ে যখন বোকার মতো উত্তাপ ছড়াতে যায়, তখন বিরোধ বাঁধে। কারণ ব্যবসায়ীরা তো ওই খাতে বিনিয়োগ করেই রেখেছে, তবে কেন উটকো ঝামেলা?

এবারের গল্প নাকি এরকম– নিউমার্কেটের দুই দোকানের বিরোধ। সেখানে প্রতিবেশী কলেজ থেকে শিক্ষার্থী ডেকে আনা হলো। ব্যস তারপর লঙ্কাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লো পুরো এলাকার ব্যবসায়ী, তাদের কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা। ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ইট-পাটকেল, রামদা নিয়ে পথে না নেমে কলেজ প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে তড়িৎ বসে যেতে পারতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কলেজের দিকে বন্দুক তাক না করে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে পারতো। মাঝখান দিয়ে হামলা, পাল্টা হামলার আয়ু বাড়তে থাকলো। প্রাণ গেলো দুই নিরীহ তরুণের।

এখন শোনা যাচ্ছে, রাজনৈতিক স্বার্থও সেখানে ঢুকে পড়েছিল। এগুলো তদন্তের বিষয়। তবে যে বিষয়টি বলা দরকার– যে কলেজের বয়স এবং মান যেকোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে ঈর্ষনীয়, সেখানকার শিক্ষার্থীদের কেন চাঁদাবাজ পরিচয়ে অভিযুক্ত হতে হবে? তাদের কেন ডাকা হবে বিরোধ মেটানোর ভাড়াটে হিসেবে? নিশ্চয়ই যেকোনও শিক্ষার্থীর জন্যই বিষয়টি লজ্জাজনক। গত কয়েক মাসে দু’বার গিয়েছি কলেজটিতে। একদিন ক্রিকেট খেলতে, আরেকদিন সাংবাদিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে। কলেজটির গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পেরেই আমি অহংবোধ করেছি। বুঝতে পারছি না, যারা ওই কলেজের শিক্ষার্থী তাদের মধ্যে ওই বোধটুকু জাগ্রত হয় না কেন?

ব্যবসায়ীদের কাছে কোনও কালেই আমার কোনও প্রত্যাশা থাকে না। মুনাফার জন্য তারা বেপরোয়া হবেই। সেখানে শালীনতা ও সৌম্য আচরণ প্রত্যাশা করাটাই লোকসান। তবে এতটুকু বুঝি– ছাত্র সংগঠনগুলো বা তাদের ছায়ায় থাকা কর্মীরা আয়-রোজগারের জন্য আশেপাশের বিপণি বিতানের ওপর ভরসা বা আবদার না করলে ব্যবসায়ীরা তাদের ওপর চড়াও হওয়ার দুঃসাহস দেখাবে না। কলেজের দিকে তাক করা রাইফেলও হবে নমিত।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

 

 

/এসএএস/জেএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ