কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ যেমন ঘুরে দাঁড়ায়, তেমনিভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত মানুষও প্রতিরোধ গড়ে তোলে নিজের অস্তিত্বের স্বার্থে। মাদারীপুরেও তাই ঘটে। আটক জঙ্গি কলেজ ছাত্র ফাহিম ঢাকা থেকে মাদারীপুরে যায় ‘কিলিং মিশনে’। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর কর্মী বলে দাবি করে। তার গ্রেফতারে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে খোদ প্রধানমন্ত্রীও সাধুবাদ জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাধুবাদ জানানোর ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই ফাহিম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন হাতকড়া পরা অবস্থায়। এই কিশোরের এরকম ‘মৃত্যু’তে নতুন করে জনমনে জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যেখানে একের পর এক ঘটে যাওয়া ‘টার্গেট কিলিং’য়ের কোনও আসামিকে পুলিশ-র্যাব খুঁজে পাচ্ছিলেন না, আসামিদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হচ্ছিল; সেখানে এমন একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আসামিকে নিয়ে অভিযান চালানো’র নামে এতো ‘দুর্বলচিত্তে’র কাজ পুলিশ কিভাবে করতে পারলো!
‘বন্দুকযুদ্ধে’র যে ‘গল্প’ পুলিশ বলছে তা যদি ‘সত্যি’ হিসেবে ধরেও নিই, তখন প্রশ্ন জাগে এমন একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আসামিকে ‘বুলেট প্রুফ’ জ্যাকেট এবং হেলমেট ছাড়া কেন অভিযানে নেওয়া হলো? যদিও আদালতে রিমান্ডে আবেদন করার সময় এই আসামির গায়ে ‘বুলেট প্রুফ’ জ্যাকেট ও হেলমেট পরা ছিলো। তাছাড়া গভীর রাতে এরকম একজন ‘জঙ্গি’কে নিয়ে বের হওয়ার সময় মাত্র ১০ জন পুলিশ সদস্যের টিম কী করে হয়? এরকম আরও অনেক প্রশ্ন দাঁড় করানো যায়। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার, তা তো হয়েই গেলো।
সাধারণ মানুষ কি আর উৎসাহ পাবে ‘গণপ্রতিরোধ’ গড়ে তুলতে? জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্ধর্ষ ‘জঙ্গি’কে ধরে ‘গণপিটুনি’তে না মেরে, বিচারের প্রত্যাশায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করাটা কি ভুল হলো?
জঙ্গি দমনে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর সহায়তা চেয়েছেন। আইজিপি বলেছেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এদের মূল উৎপাটন করতে পারবে না পুলিশ! এখন আইজিপি কী বলবেন, তার পুলিশ বাহিনীকে? নিহত জঙ্গি ফাহিমের বাবাও সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমার ছেলেকে যারা এই বিপজ্জনক অন্যায় পথে এনেছে, তাদের ধরুন।’ সত্যিই কি তাদের ধরতে পারবে পুলিশ? নাকি আসল অপরাধীদের আড়াল করতেই এসব চেষ্টা! ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা’র ঘটনা পরবর্তী সময় তো সে-ই সাক্ষ্যই দেয়!
পুনশ্চ: লেখাটা শেষ করার মুহূর্তে জানা গেলো, অভিজিত হত্যায় জড়িত (পুরস্কার ঘোষিত আসামী) শিহাব জানিয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘মুফতি বোর্ড’ কিলিংয়ের নির্দেশনা দেয়। এছাড়া গোয়েন্দাদের সে আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে সংবাদ বেরিয়েছে। জানি না, এখন আবার ‘ফাহিম’ এর পরিণতি ‘শিহাব’-এর বেলায়ও হয় কি না! রাষ্ট্রচালকদের মনে রাখতে হবে, তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।’ সাধু, সাবধান।
লেখক: সাংবাদিক
আরও পড়তে পারেন: আড়ালেই থেকে যাচ্ছে ‘ক্রসফায়ারে’র মূল