কেন রাজি নন, তার উত্তরও পেয়ে গেছি ওই আড্ডাগুলো থেকে। তারা মনে করছেন তাদের এলাকায় এক ধরনের আনুষ্ঠানিক বা পদ্ধতিগত ভাবে জন প্রতিনিধি তৈরি হয়েছে বা আরোপিত হয়েছে। তারা স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা বা আকাঙ্ক্ষা থেকে প্রস্ফুটিত হননি। ফলে এই জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের প্রয়োজন ও দাবির সঙ্গে নিজেদের একাট্টা করতে পারছেন না। বা করার ইচ্ছেও তাদের নেই। যেহেতু জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধি তারা নন, তাই জনগণের কাছে নেই তাদের জবাবদিহিতা। ফলে তারা ভোটার বা জন মনস্ক হয়ে উঠতে পারছেন না। বেশির ভাগের সেই ইচ্ছেটিও নেই। আড্ডা থেকেই জানা ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদল উভয়েই রাজনীতির সঙ্গে বিযুক্তদের ভিড় বাড়ছে। এলাকায় বাড়ছে তাদের দাপট। যে দাপুটেপনায় কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন প্রকৃত রাজনীতিবিদরা।
রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতিমনস্কদের দূরে ঠেলে দেওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে, সাধারণ জনগণও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে আস্থা সরিয়ে ফেলেছে। তাদের মতে রাজনীতির যে গত কয়েক দশকে বাণিজ্যিকিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা এখন চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে। তাই জনপ্রতিনিধিরা অর্থলগ্নি করে, তা সুদে আসলে তুলে নেওয়ার জন্যই আসেন। সেখানে সাধারণের দুঃখ, বেদনা শোনার ফুরসত তাদের নেই। জনগণের কথার বাহক হয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির কাছে দেন-দরবার করার সময়ও নেই তাদের। নিজেদের কতো চাওয়া-পাওয়ার দেন-দরবার আছে। তাই সাধারণ মানুষের কথা হলো, রাজনীতি এখন যেখানে এসে ঠেকেছে সেখানে দর্শন, প্রতিশ্রুতি, নৈতিকতা অনুপস্থিত। এখানে রাজনৈতিক কোনও নীতির আলোকে ব্যক্তি বা সমাজের পরিবর্তন ঘটবে সেই আশা করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্র বা ক্ষমতাসীন দল নিজেদের দায় থেকে যতটুকু উদ্যোগী হন, তাতেই শুকরিয়া। বাকিটা নিজেদের ভাগ্য নিজেদেরকেই গড়ে নিতে হবে। সেটা রুটি-রুজি থেকে শুরু করে স্থানীয় সংকটের সমাধান পর্যন্ত।
এই উপলব্ধি এবং মনস্তাত্ত্বিক সিদ্ধান্ত বলে দিচ্ছে বর্তমান রাজনীতি তার দর্শন দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রণোদিত করতে পারছে না। দখল ও ভোগের সংস্কৃতির বাজনায় শুদ্ধ রাজনীতির বাহকরাও দূরে আছেন। যা সুযোগ করে দিচ্ছে বা উসকে দিচ্ছে উগ্র রাজনীতিকে।
আড্ডার মানুষেরাই বললেন, বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি বিমুখ নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছাড়া কোনও উন্নয়ন টেকসই করাও সম্ভব না। এখন বাংলাদেশ যে উন্নয়নের ‘রানওয়ে’তে আছে সেখান থেকে নিরাপদ উড্ডয়ন কোনও ভাবেই রাজনীতির প্রাকৃতিক নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব হবে না। তাই তারা রাজনীতির দিকে মুখ ফেরাতেই চান। কিন্তু তাদের দাবি- শুদ্ধ এবং আদর্শের অনুশীলনে অভ্যস্ত যে রাজনীতিবীদরা অভিমানে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন, তারাও ফিরে আসুক রাজনীতির মূলধারায়। তাদের সঙ্গে শ্লোগানে গলা মেলাতে তৈরি রাজনীতিমনস্ক আম মানুষ। আমরা সেই কোরাস শ্লোগান শোনার অপেক্ষায়।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি