তেরেসা গরিবের বন্ধু ছিলেন না কখনও, বরং গরিবকে তিনি ব্যবহার করেছিলেন নিজের স্বার্থে। কলকাতার দারিদ্র দূর করার কোনও উদ্দেশ্য তার কখনও ছিল না। দুর্নীতিবাজ আর পাঁড় ক্রিমিনালদের কাছ থেকে, চোর ডাকাত কাউকে বাদ দেননি, সবার কাছ থেকেই টাকা নিয়েছেন। বদমাশগুলোকে সমাজের চোখে মহৎ মানুষ বানিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন, ওই টাকা দিয়ে দেশে দেশে নিজের নামে মিশনারি ছাড়া আর কিছু বানাননি। কলকাতায় এমন কিছু গড়ে দেননি, যা থেকে দরিদ্রের দুর্দশা ঘুচতে পারে। ভালো একটি হাসপাতালও বানাননি, যে হাসপাতালে দরিদ্র রোগীরা আধুনিক চিকিৎসা পেতে পারে। নিজে কোনও রোগীর রোগ সারাবার ব্যবস্থা করেননি। কিন্তু তার যখন অসুখ হলো, বিদেশের বড় বড় হাসপাতালে তার চিকিৎসা হলো। এসবকে তো আমরা হিপোক্রেসিই বলি, তাই না?
কলকাতার গরিব ছেলেমেয়েদের বিদেশে দত্তক দিতেন টাকার বিনিময়ে। সনাতন পাওয়েল বেলজিয়াম থেকে কলকাতায় নিজের শেকড় খুঁজতে এসে বলেছেন, বেলজিয়ামে যে দম্পতি তাকে দত্তক নিয়েছিলেন, তাদের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখেছেন, তাদের কাছ থেকে তেরেসার শিশু সদন লাখ টাকার ওপর নিয়েছে। কোনও শিশুকে দত্তক দেওয়ার অধিকার কোনও চ্যারিটি সংস্থার নেই। মাদার তেরেসা সেবা কেন্দ্ররও নেই। এটা স্রেফ শিশুপাচার। সনাতনের বাবা-মা বেঁচে থাকারও পরও সনাতনকে অনাথ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, দত্তক দেওয়ার সময় সনাতনের বাবা মা’র কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।
১০০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশে থাকতেন তেরেসা, গর্ভপাত আর জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। গণধর্ষণের কারণে মেয়েরা গর্ভবতী হলেও তিনি গর্ভ রক্ষা করার উপদেশ দিতেন। তিনি নারী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন। নারীর নিজের শরীরের ওপর নিজের কোনও অধিকার আছে বলে তিনি মানতেন না। মানবাধিকারেরও বিরোধী ছিলেন।
তেরেসার কারণে দুনিয়ার মানুষ জানে কলকাতা একটি দরিদ্র শহর, যে শহরে মানুষ ক্ষিধেয়, আর দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগে, খাদ্য নেই, চিকিৎসা নেই, সবাই রাস্তায় পড়ে পড়ে ধোকে। সবাইকে বাঁচিয়েছেন আলবেনিয়ার নান তেরেসা। তেরেসার কারণে মানুষ জানেনা কলকাতায় দারিদ্র আছে বটে, কলকাতায় কবি সাহিত্যিকও আছেন, কলকাতা নোবেল পুরস্কার পাওয়া রবীন্দ্রনাথের শহর। কলকাতায় উন্নত মানের নাটক সিনেমা হয়, নৃত্য সঙ্গীত হয়। কলকাতায় বড় বড় বিজ্ঞানীদের বাস। দুহাজার পাঁচ/ছয় সালে ইউরোপ আমেরিকায় অনেকে প্রশ্ন করে জানতো আমি কলকাতায় বাস করি, ওরা অবাক হয়ে দেখতো আমাকে, ভেবে পেতো না কী করে এক- শহর কুষ্ঠ রোগীর সঙ্গে বাস করি আমি। আমি ওদের ভুল ভাঙাতাম। কিন্তু একা আর ক’জনের ভুল ভাঙানো যায়! মাদার তেরেসা তো কলকাতা সম্পর্কে বড় এক মিথ্যে ছড়িয়ে গেছেন বিশ্বময়।
তেরেসা সম্পর্কে সত্যিটা মানুষকে জানানো বিপদ অনেক। কারণ স্রোতটাই তেরেসার পক্ষে। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়াতে শিরদাঁড়ায় জোর থাকতে হয়, সেটি হাতে গোনা ক’জনেরই আছে। তেরেসার আসল চেহারা ফাঁস করে দেওয়ার পর আমাকেও কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি।
লেখক: কলামিস্ট