পক্ষকাল জুড়ে আমি যে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তাতে এ প্রশ্নের সদুত্তর আমি খুঁজে পাইনি। ঢাকা-কুয়াকাটা, ঢাকা- রাজশাহী, ঢাকা- সুনামগঞ্জ, ঢাকা- খুলনার পথে পথে দেখেছি আমাদের তরুণরা কতটা বিভ্রান্ত। তাদের সামনে কোনও অনুকরণীয় বা অনুসরণীয় নেতৃত্ব নেই। তারা যে শিক্ষার শিক্ষিত হচ্ছে তার কোনও বাজার চাহিদা নেই। পুরনো প্রশ্নতো রয়েই গেছে শিক্ষার মান নিয়ে। পাঠ্যপুস্তকে হেফাজতের অনুপ্রবেশ এখনো আলোচনায় । ইংরেজি মাধ্যম এবং মাদ্রাসা শিক্ষা দেশের ইতিহাস বিচ্যুত, চর্বিত চবণ হচ্ছে এ বিষয়টি নিয়েও। আরেকটি বিষয় দেখতে হবে আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবন পদ্ধতি ও আচরণ বদলে গেছে। এ বদলে যাওয়া সমাজের উঁচু ও নিচু তলায় ঘটেছে একযোগে। মধ্যবিত্ত পরে এসে দ্রুত যোগ দিয়েছে। এই পরিবর্তনে ধর্মের প্রভাব বেড়েছে। কিন্তু এই ধর্ম চচায় প্রশান্তি নেই, উগ্রতা স্পষ্ট। ফলে সেখানে সহিষ্ণুতার কোনও স্থান নেই। এই অসহিষ্ণুতা আবার পুঁজি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষমতার রাজনীতিতে। ক্ষমতা ধর্মীয় উগ্রতাকে দুইতে রাখে, বিশ্ব রাজনীতি এধর্মেই চলছে।
আইএস বা ইসলামিক স্টেটের জন্ম রহস্যতেও এর ইঙ্গিত আছে। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া এলাকার পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের একজনের মন্তব্য ছিল বাংলাদেশে আইএস জঙ্গি আছে। বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ করে বলেছে, আইএস নয় জঙ্গিরা স্থানীয় ভাবে উদ্ভূত ।
বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘ হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী এ নিয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে ঘরে বাইরে তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে, যাক। ঘরোয়া রাজনীতি এবং বাইরের কুটনীতির স্বার্থে হয়তো এটি চালিয়ে যেতে হয় বা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক অনুশীলন, প্রায় চার কোটি তরুণের সামনে অনুসরণ বা অনুকরণ যোগ্য নেতৃত্ব, শুদ্ধ রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে আসতে বিলম্ব যত হবে ততো দীর্ঘ হবে জঙ্গিবাদ নির্মূলের কাজ। লেখাটির যখন শেষ প্রান্তে তখন আবার খবর এলো, খিলগাঁওয়ে পুলিশ চেকপোস্টে হামলার সময় আরেক তরুণের প্রাণ গেছে। অর্থাৎ তারুণ্য অপচয়ের আরেকটি দুঃসংবাদ। এখন ফেরীর ওই ব্যক্তির হয়ে আমিই প্রশ্ন রাখতে চাই, তরুণদের সামনে বিশুদ্ধ আদর্শ নিয়ে হাজির হতে আমরা আর কত দেরি করবো?
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি