গ্রামীন বা প্রান্ত এলাকার ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখার সময়তেই খবর পাচ্ছিলাম মূল শহর এলাকার ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম। তাই দেখতে পেলাম এসে ভিক্টোরিয়া কলেজে। বাইরে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় থাকলেও ভেতরটা প্রায় ভোটারহীন। এখানেও পুরো শহরে হঠাৎ দুই-একজন ধানের শীষের কর্মী চোখে পড়লেও, তাদের সক্রিয়তা চোখে পড়েনি। মাঠে বিভিন্ন গণমাধ্যমের যে কর্মীরা ছিলেন তাদের কাছ থেকেও জানা- বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো কর্মী ছাড়া অন্যত্র বিএনপি কর্মীরা ছিল বিরল। শহরের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশ বেশিই। এই দৃশ্য দেখে চায়ের আড্ডায় ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যাওয়া কেউ কেউ মন্তব্য করছিলেন- নৌকার দিকে ভোট যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়রা মৃদু হেসে বলেছিলেন- সবুর করেন, দেখবেন ভোট কোন দিকে যায়।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই ১০৩টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল আসতে শুরু করে। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই কেন্দ্রগুলো থেকে অসমর্থিত সূত্রে ফলাফল পাচ্ছিলাম। সেখানে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ব্যবধান স্পষ্ট হতে থাকে। বুঝা যাচ্ছিল জয়ের পথে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু। ভোটের প্রচারণায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে যাওয়া, আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে সহায়তা করতে যাওয়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে তথ্য যাচাইয়ের জন্য তাদের ফোনে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু ওই মুহূর্তে বেশিরভাগের মোবাইল ফোন বন্ধ পাই, এবং যাদেরকে ধরতে পারি আমরা তারা তখন ঢাকার পথে। আঞ্জুম সুলতানা সীমার আশপাশে কেন্দ্রের নেতারা নেই। না থাকলেও তিনি গণমাধ্যমের কাছে পরিশীলিত এবং বিচক্ষণ প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছেন ফলাফল প্রসঙ্গে।
অন্যদিকে বিজয়ের পরেও মনিরুল হক সাক্কু স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে পারেননি। এটা গণমাধ্যমের কাছে তার বিজয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াতে স্পষ্ট।
কুমিল্লার নৌকা এবং ধানের শীষ সমর্থকদের মাঝে যারা নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তারা ভোটের দিনের আগে থেকেই বলছিলেন সীমার পরিবারের রাজনৈতিক রিপোর্ট কার্ড ভোটে প্রভাব ফেলবে। একই ভাবে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রকাশ্য দ্বন্দ্বও ফলাফল নৌকাকে ডুবিয়ে দিতে পারে। তাদের কাছ থেকেও এই পূর্বাভাসও ছিল- ভোটের দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে বা কাউন্সিলরদের মিস্টি কুমড়া, জিপ গাড়ি, পাখার মতো প্রতীক নিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ধানেরশীষের কর্মীরা সক্রিয় থাকবে। ভোটের দিন সেই পূর্বাভাস মিলে যেতে দেখেছি।
চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই কুমিল্লার স্থানীয়রা বলেছেন- সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ যাদেরকে কুমিল্লায় পাঠিয়েছিলেন তাদের কার্যক্রম টাউন হল কেন্দ্রিক ছিল। মাঠে তারা কম ঘামই ঝড়িয়েছেন। আঞ্জুম সুলতানা সীমার নির্বাচনি প্রচারণা ও নির্বাচনি নকশা তৈরিতে তারা কারিশমা দেখাতে পারেননি। বিএনপি প্রার্থী এবং তার কর্মীদের অবশ্য খুব একটা ঘাম ঝরাতে হয়নি নির্বাচনের মাঠে। তারা আড়ালে থেকেই ক্ষমতাসীন দলের কোন্দলের ফসল নিজেদের ঘরেই তুলে নিতে পেরেছে কুমিল্লার ঐতিহ্য মতো।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি