সুবোধ কেন পালাবে? পালাতে চাইতেই পারে সে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ সে। তাতে রুজির জন্য পথে নামতে হয়। পথে নামামাত্র তাকে জিন্মি হয়ে পড়তে হয় পরিবহন শ্রমিক-চালক-মালিকের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে। যখন যেমন খুশি ভাড়া আদায়। ইচ্ছে করলে বাসে তুলবে, আবার গলা ধাক্কা দিয়ে নামিয়েও দেবে। প্রতিবাদ করলে ধর্মঘট। সুবোধ এই স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে বাঁচে কী করে? রোগ-বালাই নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হয়। সেখানে আবার চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ড বয়ের দৌরাত্ব। সেই দৌরাত্ব সইবার পরেও যদি ঠিকঠাক চিকিৎসা মিলতো তাহলে মনকে বোঝানো যায়। সেখানে আবার ডাক্তারে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, রোগ নির্নয়ের রকমারি পরীক্ষায় ভেজাল। সুবোধ মন-স্বাস্থ্য ঠিক রাখবার জন্য খাবেটাই বা কী? খাবারেও যে বিষ। মাছে বিষ, ফলে বিষ, সবজিতে বিষ। শরীরটাই যে তার বিষিয়ে উঠলো। সুবোধ তার সন্তানের লেখাপড়া নিয়েও স্বস্তিতে নেই। স্কুলে কত রকমের যে পরীক্ষা চালু হয়েছে, সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সন্তান মূল বই পড়ে না। গাইড বই দিয়েই নাকি এখন লেখাপড়া চলছে। মূল বই নিয়েও ঝামেলা। সেখানে ধর্ম ঢুকে গেছে। পরীক্ষার টেবিলে বসতে যাবে, যাওয়ার আগেই শোনে প্রশ্নপত্র ফাঁস। তারপরও না হয় পরীক্ষা দিয়ে বেরুলো নানা রকম গাণিতিক তকমা নিয়ে। কিন্তু ভর্তি হবে কোথায়? সেখানেও প্রশ্ন ফাঁস আর মানহীন শিক্ষার বাণিজ্য।
সুবোধ দেখে নিজের চাকরিতেও সুবিধা হচ্ছে না। পদোন্নতির জন্য রাজনীতির সিল ছাপ্পর লাগে। ভালো থাকতে হলে দুনীর্তি মহাঔষুধ। একবার সুবোধ ভাবে শহর ছেড়ে সবুজ গ্রামে ফিরে যাবে। সেখানে স্বচ্ছ জলের মতো হবে তার জীবন। কিন্তু দুঃসংবাদ সেখানেও। সুবোধের ভিটেও দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। বলা হচ্ছে সুবোধ তুই ভিটে ছাড়। এই ভিটেতে থাকার তোর কোনও অধিকার নেই। সুবোধ ডাঙা ছেড়ে জলে ভেসে যেতে চাইছিল। কিন্তু সেই জলও ক্ষমতাশালীদের দখলে। ক্ষমতার দাপটে জলে দুর্গন্ধ। নাক-শরীর সইতে পারে না জল। সুবোধ তখন দেয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় সেখানে নিজেকে আঁকবার চেষ্টা করে। দেয়াল তখন আয়না হয়ে যায় বুঝি। বিভ্রান্ত, বিষময় মুখচ্ছবিটাই তখন দেয়ালে ফুটে ওঠে। তার পাশে সুবোধ লিখে দেয়-সুবোধ তুই পালিয়ে যা।
কিন্তু পালিয়ে যাওয়াতে কোনও সমাধান নেই। সুবোধকে এই শহরে, এই দেশেই রয়ে যেতে হবে। সুবোধ যদি পালিয়ে যায়, আইজুদ্দিন যদি দেশান্তরি হয় তবে এই শহর, দেশ যে আর আম মানুষের রইবে না। সব চলে যাবে নষ্টের দখলে, রাজ্য হবে নষ্টদের। নষ্টদের রুখে দাঁড়াতে নষ্টামির প্রতিরোধ করতেই সুবোধকে বলতে হবে- পালাবে না সুবোধ, রুখে দাঁড়াও।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি