বাজেট উন্নয়নবান্ধব, বাস্তবায়নে রয়েছে চ্যালেঞ্জ

ড. নাজনীন আহমেদপ্রতিবছর বাজেট নিয়ে আমাদের আলাদা আগ্রহ থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কতোটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, তা এই বাজেটের মাধ্যমেই বোঝা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় ঘোষণা করা হয়েছে বাজেট। এবারের বাজেটটি উন্নয়নবান্ধব। উন্নয়নের জন্য এ বাজেট এক নতুন বাস্তবতা। তবে এটি কতটা জনবান্ধব হবে এবং কতো ভালোভাবে উন্নয়নের জন্য তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তা সময়ই বলে দেবে।
এবারের বাজেটটি শিল্পবান্ধব। ফলে শিল্প উন্নয়নে বাজেটে বিভিন্নভাবে প্রণোদনা রয়েছে। আর যেহেতু দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি, তাই বেকারদের কর্মসংস্থানের বিরাট জায়গা তৈরি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে সরকার যে সবসময় দক্ষ জনশক্তি তৈরির কথা বলে আসছে, তার প্রতিফলন দেখা যায়নি বাজেটে। দক্ষজনশক্তি তৈরির জন্য ভালো বাজেট এটি নয়। শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু দক্ষজনশক্তি তৈরিতে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল।
নারীর উন্নয়নে আলাদা করে খুব ভালো কিছু রাখা হয়নি। নারীর উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহী করার জন্য তেমন কোনও সুযোগ রাখা হয়নি বাজেটে। এছাড়া নারীদের হোস্টেল, ক্লাব তৈরির জন্য বাজেটে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। দারিদ্র বিমোচনের জন্য খেটে খাওয়া মানুষের উন্নয়নের জন্য বাজেটে তেমন কিছু রাখা হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচনের জায়গাটিতে অবহেলা করা হয়েছে।
এছাড়া মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আইন নিয়ে আমরা যতটা হাঁক ডাক শুনছিলাম, সরকারের কাছে এটারও তেমন কোনও প্রতিফলন ঘটেনি বাজেটে। মূসক নিয়ে এমন কিছু ফাঁক-ফোকর রাখা হয়েছে, যা দেখে মনে হচ্ছে কেউ কেউ ইচ্ছা করলেই লবিংয়ের মাধ্যমে পার পেয়ে যাবে। অনেক পণ্যে ব্যবসায়ীরা মূসক আদায় না করেই পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
ব্যাংকে সঞ্চয়ের ওপর সুদের নতুন যে নিয়ম করা হয়েছে সেটা একদমই ঠিক হয়নি। ব্যাংকে ইম্প্রেশনও ৫ শতাংশ আবার সুদের হারও ৫ শতাংশ। এটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। কারণ এই ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা আয় ধরেছেন। কিন্তু যখনই সুদের হার বেড়ে যাবে তখন তো সঞ্চয়পত্র কেনা থেকেও পিছিয়ে যাবেন সাধারণ মানুষ। হতে পারে স্বল্প আয়ের মানুষের চেয়ে ধনীরাই এই সঞ্চয়পত্র বেশি করেন, সুদের হার বাড়লে তারাও তো মুখ ফিরিয়ে নেবেন। বরং উচিত ছিল স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও সঞ্চয়পত্র কেনা সুবিধাজনক করে দেওয়া।

এই বাজেটে বেশ কিছু জিনিসের মধ্যে সোলার প্যানেলের দামও বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু সরকার যেখানে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে সোলার প্যানেলের দাম কেন বাড়াতে হবে? যেখানে দেশে এখনও শতভাগ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি।

মোটা দাগে উন্নয়ন বান্ধব বাজেট। তবে অন্যান্য বারের চেয়ে খুব যে ব্যতিক্রম ও চোখে পড়ার মতো এমন কোন বাজেট এটি নয়। কারণ, পেছনের বছরগুলোতে বাজেটে যেসব দুর্বলতা ছিল, সেই দুর্বলতার জায়গাগুলো রেখেই এবারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই বাজেটটি কতো স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে, এটাই আগামীর বাস্তবতা।

লেখক: অর্থনীতিবিদ।