অর্থমন্ত্রী যে বৃত্তের মধ্যে থাকেন তাদের বড় অংশ অযুত কোটিপতি বা কোটি টাকার মালিক। তার বৃত্তের বাইরে যারা আছেন সমাজের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত যে মানুষেরা, তাদের অনেকেরই লাখ টাকা আছে। কয়েক লাখ টাকাও আছে কারো কারো। এই টাকায় কোনও কালো দাগ নেই। আছে ঘামে ঘ্রাণ। তারা সেই টাকা বিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাংকে রেখেছেন। তাদের আপদ-বিপদের শঙ্কা আছে। আছে আগামীর স্বপ্ন। কেউ টাকা জমিয়ে রাখেন অবসর জীবনের অন্ন ও চিকিৎসার জন্য। কেউ টাকা জমিয়ে রাখেন সন্তানের লেখাপড়া কিংবা বিয়ের খরচ জোগাতে। অর্থমন্ত্রীর যদি জমির আইল ধরে হাঁটার অভ্যেস থাকে। গ্রামের কোনও হাটে চা পানের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তার জানার কথা কত কৃষক তার ফসল বিক্রির কানা কড়ি কিভাবে জমিয়ে রাখেন কন্যাকে পাত্রস্থ করার জন্য। অর্থমন্ত্রী যদি এই শ্রেণিকে বিত্তশালী বলে জেনে থাকেন, বা আখ্যা দিতে চান-তাহলে তাদের জীবনের সঙ্গে রসিকতাই করা হবে। এই মানুষগুলো ব্যাংকে টাকা রাখতে চান, সেখানে কিছু মুনাফা পাবেন বলে। এখন যদি আসল টাকাতেই টান পড়ে তাহলে উপায়? সেই পুরনো দিনের মতো মাটির নিচে হাঁড়িতে টাকা লুকিয়ে রাখার দিনে ফিরে যেতে হবে তাদের? দশ টাকায় কৃষকের জন্য ব্যাংক হিসেব করার সুযোগ দেয় যেই সরকার, যেই সরকারের সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং’র কৃষি বিপণনে বিপ্লব এনে দিয়েছে, সেই সময়ে এই ভাবনা বা নির্দেশনে রসিকতা ছাড়া আর কী!
অর্থনীতির তত্ত্ব যারা বুঝেন, তারা বলছেন অর্থমন্ত্রী পরোক্ষভাবে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন। বিশেষ করে পুঁজি বাজারের দিকে। পুঁজি বাজারে সাধারণ মানুষ ঘটি-বাটি-ভিটা বেঁচে দুবার ঝাঁপ দিয়েছিল। দুইবারই সেই সাধারণ মানুষের টাকা কিভাবে প্রকাশ্য লুট হলো একথা অর্থমন্ত্রীরও জানা আছে। তিনি সেই লুটের কোনও আচার-বিচার করতে পারেননি। ফিরিয়ে আনতে পারেনি পুঁজি বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা। তবে আগুনে যার ঘর পুঁড়লো তাকে আবার সিদুঁর রাঙা মেঘ দেখানোর সাধ হলো কেন? অর্থমন্ত্রীর বরং তৃপ্তির ঢেঁকুড় তোলা উচিত-ব্যাংকের টাকার যে এতো লুটপাট হলো, হচ্ছে। তারপরও সাধারণ মানুষ যে তার ঘামে ভেজা টাকা, স্বপ্নে মোড়ানো টাকা ব্যাংকে রাখছে। রাষ্ট্র বহুদিন ধরেই সামাজিক নিরাপত্তা কথা বলে আসছে। সেখানে বরাদ্দ থাকছে। কিন্তু সাধারণের স্বল্প আয় এবং সঞ্চয়ের নিরাপত্তা কি দিতে পারছে? রাষ্ট্র সামাজিক নিরাপত্তার খাতায় এই দুটি বিষয়কেও অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। তবেই কার্যকর হবে তাদের সামাজিক নিরাপত্তার মূল উদ্দেশ্য-বিধেয়।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি