মাঝে চাঁদপুরে কিছু সময় কাটাতে হয়েছে। ঘণ্টা দুয়েক সময়। সেই সময়টুকুতে কথা হলো অনেক পরিচিত-অপরিচিত জনের সঙ্গে। তাদের কাছ থেকে জানা- রাজনীতির আদর্শিক লড়াইয়ে তরুণদের ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই কথা লক্ষীপুরেও শুনে এসেছি। তরুণ বিভক্ত করে দেওয়া হচ্ছে ক্ষমতা উপভোগের প্রলোভনে। একই রাজনৈতিক দলে তরুণরা বিভক্ত হয়ে পড়ছে দখলের শক্তি কোন দিকে তা বিবেচনা করে। তবে সবাই যে সেদিকে মেতে আছে তা নয়। চাঁদপুরের তরুণরাও বিভিন্ন সংগঠন থেকে নানা ভাষায়-ইশারায় তারণ্যের অপচয়ের প্রতিবাদ করছে। সংগঠিত করছে তরুণদের শুদ্ধ সংস্কৃতি ও রাজনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে তৈরি হতে।
দিন দুয়েকের বিরতি দিয়ে আবার পথে বেরিয়ে পড়া। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর। সঙ্গী ছিলেন কয়েকজন রাজনীতিবিদ বন্ধু। তাদের দেখে পথে পথে নেতা-কর্মীদের জমায়েত, স্লোগান। সেখানে তরুণদের ভিড়ই বেশি। বিভক্ত তারাও। একই দলে ক্ষমতা উদযাপন নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। আগামীতে কোন পক্ষ ক্ষমতা দখলে রাখতে পারবে, সেই অঙ্ক কষে এখন থেকেই বিভক্তি। রাজনীতিবিদ বন্ধুরাই বলছিলেন তরুণদের মধ্যে যদি আদর্শিক ভাঙন থাকতো, বিভক্তি থাকতো তাহলে সেটিকে শুদ্ধ রাজনৈতিক অনুশীলন হিসেবেই দেখা যেত। কিন্তু ক্ষমতা উপভোগের প্রলোভন এবং ঈপসা নিয়ে যে দ্বন্দ্ব এবং লড়াই, তা একপ্রকার আত্মহনন। কারণ এই দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি করছে না। তৈরি করছে দখলবাদী নেতৃত্বের উপাসক। আদর্শের উপাসক না হয়ে দখলবাদী নেতৃত্বের উপাসক হলে, বর্তমান তারুণ্য আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে উঠবে না।
জেলা শহরগুলোতে ভোগের আয়োজন বেড়েছে। যেখানে এক সময় এক কাপ চা খেতে টঙ খুঁজে বেড়াতে হতো, সেখানে এখন কফি সুলভ। রাজধানীর নামি-দামি ফ্যাশন হাউজগুলোও পৌঁছে গেছে সীমান্তবর্তী শহরে। ভোগের সকল উপকরণের ফাঁকে ফাঁকে আছে মাদক। এই মাদক কেড়ে নিচ্ছে তারুণ্যের উদ্যমতা। বছর দুই আগেও যে তরুণকে রাজনীতি বা সংস্কৃতির ময়দান দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যেতো, সেই তরুণ এখন ঝিমুনিতে আছে। কেউ কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এই মাদকও রাজনৈতিক প্রশ্রয় ছাড়া বিপণন হয় না। এমনটাই খবর পেলাম স্থানীয় মানুষ জনের কাছে। তারাই বলছেন তরুণদের কেউ এখন আর যত্ন নেয় না। ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এই তথ্যগুলো হয়তো আমাকে হতাশার ঝিমুনিতে ডুবিয়ে দিতে পারতো। পারেনি, কারণ আমার সঙ্গে দেখা হলো, অসংখ্য তরুণের সঙ্গে। যারা নিজেরাই জেগে উঠছে। নিজেদের রক্ষার জন্য কারও ওপর তারা ভরসা করছে না। ওদের কথা- আমরাই আমাদের যত্ন নেবো। আমাদের উদ্যম হারিয়ে যাওয়ার নয়, নষ্টদের প্রতিবাদে, রাজনীতির, সংস্কৃতির মুখোশ মানুষগুলোর বিরুদ্ধে আমরা আবার ময়দান মুখোর করে তুলবো। আপনারা শুধু আমাদের ওপর আস্থা রাখুন, আমরা আদর্শের উপাসনা করতে চাই, ভোগ দখলের নয়।
যখন রাজধানীতে ফিরছিলাম, তখন তুমুল শ্রাবণ ঝড়। দুইপাশের জনপদ অন্ধকার। আঁধারের পথ ভেঙ্গে আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শ্রাবণের জলধারা। সেই জলধারায় আলো ঝরছে। সেই আলো কখনো আমরা দেখতে পাই কখনো পাইনা। আমাদের তরুণরা যেন সেই আলো। ষড়ঋতু জুড়ে সেই আলো আমাদের জড়িয়ে রাখুক।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি