জাগছে বাংলাদেশ

তুষার আবদুল্লাহআপনারা টের পাচ্ছেন? ভূ-কম্পনের কথা বলছি না। ভূ-কম্পন হলেই বা কী, সবাই কি কম্পন টের পায়, বুঝতে পারে? সব দুলে ওঠা তো আর কম্পন নয়। বাংলাদেশের জমিন দুলছে, থেমে থেমে কেঁপে উঠছে। এই কেঁপে ওঠা যে কেবল আমি টের পাচ্ছি, তা নয়। অনেকেই অনুভব করতে পারছেন। শুরুতে আমার, আমাদের দ্বিধা ছিল, সত্যি কাঁপছে তো? বাংলাদেশের মানচিত্রের নানা প্রান্তে যেতে হয় রুজি ও সাংগঠনিক কাজে। এই সফরগুলোয় একেকটি জেলা, উপজেলা ও গ্রামকে নিবিড়ভাবে, কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়। প্রান্তের মানুষ ও জনপদের ভাঙন ও জড়ো হওয়াটাও বোঝা যায়। নদীর ভাঙন যেমন একটি জনপদকে বিধ্বস্ত করে দেয়, তেমনি একাট্টা হয়ে থাকা মানুষের মধ্যে তৈরি ফাটল ও এক সময় সেই ধসে পড়া একটি জনপদ ও সমাজকেও বিলীন করে দেয়। এই বিলীন হয়ে যাওয়া দেখে নিকট অতীতেও আঁতকে উঠতাম। যখন দেখেছি—মৌলবাদের আস্ফালন, ধর্মের উগ্র আগুনে মানুষ ও তার সংস্কৃতি পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছিল, বিপন্ন হয়ে পড়ছিল মানুষের মনচিত্র।
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উগ্রতার ভয়ে সাংস্কৃতিক অনুশীলন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারুণ্যের উচ্ছলতায় কম্পিত সংগঠনগুলো চলে গেছিল শীত ঘুমে। উগ্র স্লোগানের নিচে পিষ্ট হয়েছে জাগরণের কোরাস। তাই দেখে আমরা উৎকণ্ঠিত হচ্ছিলাম। দশ দিক থেকে নেমে আসা অন্ধকার দেখে ভেবে নিয়েছিলাম এই অন্ধকার কুঠুরিই হবে আমাদের জন্য অনিবার্য।
হঠাৎ দেখছি অন্ধকার কুঠুরিতে আলোর রেখা। ক্ষীণ সেই রেখা প্রশস্ত হচ্ছে। হোক না ধীর গতিতে, একসময় হয়তো দ্রুতলয়ে আলো ছড়িয়ে পড়বে। এমন নয় যে, মৌলবাদের আস্ফালন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি থেমে গেছে। রাঙা চোখ সরল হয়নি। তবু দেখছি—বন্ধ হয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক অনুশীলনগুলো আবার কপাট খুলতে শুরু করেছে। ঘুলঘুলি, জানালা হয়ে দরজা খুলতে শুরু করেছে।
তরুণরা এখন আর কোনও রাঙানিকে ভয় পাচ্ছে না। তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ফিরে যেতে চাচ্ছে তাদের উদ্যমের সময়ে। তরুণরা সরাসরি এখন কোনও দ্বন্দ্ব বা বিরোধে যেতে চাচ্ছে না। আপাতত তারা পুরনো জমিনটা আবার তৈরি করে নিতে চাচ্ছে। সুফলা করে নিতে চায়। তরুণরা বলছে—যেকোনও অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়ে। অপহৃত শক্তি ফিরে পেতে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে সেই জাগরণ।
আপাতত হয়তো সেই জাগরণের কম্পন সবাই অনুভব করছেন না। কিন্তু আমি পূর্বাভাস দিতে পারি, শিগগিরই বড় একটি কম্পন আসছে। তার মাত্রা রিখটার স্কেলের দশ মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে। জেগে উঠছে বাংলাদেশ। আসুন আমরাও সেই জাগরণের যাত্রী হই।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি