সেখানে ধরপাকড় আছে, পথে নামাতে বারণ আছে, কোথাও কোথাও হয়তো অফিস খুলে বসারও সংকেত নেই। মামলা তো পুরনোগুলো চলছে, তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন। আছে নিজেদের মধ্যে টানাপড়েন। দলের ভেতরে একাধিক গোত্র। বিরোধী দল হয়তো মামলা ও ধরপাকড়ের হয়রানিতে আছে, নিজেদের গোত্র বিভেদ কম অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে। ভোটের আগে কিছু বিরোধ বাড়তেও পারে মনোনয়নের রেষারেষিতে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের বিরোধ এখন অন্দরে নেই, প্রকাশ্যে প্রায় নিয়মিত প্রদর্শিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আজিমপুরে মহানগর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সমাবেশের জায়গায় আবর্জনা নিক্ষেপ ও মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটলো। দলের নেতারাও বলতে বাধ্য হচ্ছেন, দলে অনৈক্য থাকলে আগামী নির্বাচনের ফসল ঘরে নাও উঠতে পারে। নিকট অতীতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ফল পক্ষে না যাওয়ার কারণ দলীয় বিরোধ। আসছে রংপুর নির্বাচনের পূর্বাভাসও স্বস্তির নয়। বাদ বাকি পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আছে নানা আশঙ্কা।
মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যেও অগোছালো ব্যাপারটা রয়েছে। তাদের কেবলা সংকট মেটেনি। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দ্বিধা ও নিষ্ক্রিয়তা কাটেনি। তারপরও ৫ জানুয়ারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা এখন প্রকাশ্যে অন্তত একাট্টা। সরকারি দলও বলছে এবারের নির্বাচন ২০১৪-এর নির্বাচনের মতো হবে না। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের জন্য আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। নির্বাচনকে সাধারণের কাছে, জগতের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তারা বিএনপিকে রাজপথে রাখতে চাচ্ছে পাশাপাশি।
তাই এক প্রকার উদারপন্থা নিয়েছে তারা। বিএনপি চেয়ারপারসন উখিয়া গেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১২ নভেম্বর বিএনপি সমাবেশও করতে পেরেছে। সিনিয়র নেতারা এখন মুক্ত। কারাগারে তেমন নেতাকর্মী নেই। তবে মাঠে যে পাল্টাপাল্টি বিরোধ দেখা যায়, সেটি হচ্ছে সেই সনাতন ঢঙে।
পথে অবরোধ, বহরে হামলা, সভাস্থলে যাওয়ার পথে বাধা। এগুলোর জন্য কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে দায়ী করা যাবে না। এটি আমাদের রাজনৈতিক চর্চা, রেওয়াজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, আমাদের রাজনৈতিক চর্চার গুণগত পরিবর্তন হয়নি। হয়নি যে তার আরেকটি প্রামাণিক দলিল হচ্ছে ভোট কার অধীনে হবে, এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যেমতে পৌঁছার মতো বা স্থায়ী কোনও উপায় খুঁজে বের করতে পারেনি। যখন যে ক্ষমতায় যাচ্ছে, সে তখন অতীত বা তার নির্বাচিত হয়ে আসা প্রক্রিয়াকে ভুলে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে এসে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও উদার, গণতান্ত্রিক ও আধুনিক হওয়ার প্রয়োজন আছে। তাদের লড়াই আসলে ইশতেহারকেন্দ্রিক হওয়া উচিত। সাধারণ ভোটাররা আশা করেছিলেন ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক শুদ্ধতার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সেই প্রতাশ্যায় গুড়েবালি।
কিন্তু অদম্য বাঙালি নিরাশের মন্ত্র জানে না। বার বার সামান্য ঝলকানিতে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। নতুন করে আশার নকশা আঁকে। এখন যখন সারাদেশে একের পর এক ভোটের ফুল ফুটতে শুরু করেছে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ভোটের কলি ধরেছে, তখন তারা আবার আশাবাদী হয়ে উঠছে, এবার হয়তো রাজনীতি কল্যাণ রাষ্ট্রের মানচিত্র আঁকবে। সকল কলি যে ফুল হয়ে ফুটে তা নয়। তারপরও কোনও না কোনও কলি তো ফুটবেই। ভোটের সেই কলি, সেই ফুল আমাদের রাজনীতিতেও কল্যাণের সৌরভ, সম্প্রীতি ছড়িয়ে দিতে পারে। ইচ্ছে বাগানের মালিদের। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা হচ্ছেন সেই মালি। তাদের হাতে ভোটের সেই ফুল সুরাদর হয়ে ফুটুক।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি