প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে টেলিভিশন, অনলাইন পত্রিকা ও সংবাদপত্রের যারাই রিপোর্ট করেছেন, তারা প্রত্যেকেই ফাঁসকারীর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। তাদের কথা বলার ফোন আলাপ গণমাধ্যমের কাছে আছে। বরং শিক্ষাবিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, বোর্ড ও অধিদফতরের কর্তা ব্যক্তিদের টেলিফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ এড়িয়ে গেছেন। দুই একজন অন্যের ওপর দায় চাপিয়েছেন। কথা হলো—গণমাধ্যমকর্মীরা যদি ফাঁসকারীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, শিক্ষা বিভাগ নিজে ও অন্যান্য দফতরের সহায়তা নিয়ে কেন তাদের পাকড়াও করতে পারছে না। নাকি এই উদ্যোগ নিলে তাদের ভেতরের ভূতগুলোর চেহারা প্রকাশ্যে চলে আসবে?
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রশ্নফাঁস এখন সমাজে, রাষ্ট্রে মহামারী আকার ধারণ করেছে। স্কুল, কলেজ, চাকরি—সব ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এই ফাঁসের সঙ্গে কোচিং ব্যবসার যেমন যোগসূত্র আছে। তেমনি এসব পরীক্ষার আয়োজক ও ব্যবস্থাপকদেরও কালো হাত আছে। সুতরাং মহামারীর চিকিৎসা শুরু করতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতর থেকেই। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন আয়োজনে, তার সক্ষমতা ও অদক্ষতার দিকটিও মূল্যায়িত হতে হবে। স্কুল, কলেজের শিক্ষকরা কোচিং সেন্টার থেকে পালিয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে অনেকটা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’-এ গিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছেন।
এখন যে দু’টি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিলের কথা ভাবা হচ্ছে, তাতে ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর ওপর বাড়তি চাপই দেওয়া হবে। তাদের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কয়জন ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হাতে নিয়েছেন? খুব নগণ্য সংখ্যাই বটে। তার দায় কেন সব পরীক্ষার্থীকে নিতে হবে? প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কারণ, আমরা মনে করি, এরমধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রের মেধা যাচাইের প্রক্রিয়ায় ধস নামবে। প্রকৃত মেধা মূল্যায়িত হবে না। মেধাবী বা সাধারণ পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাগ্রহণ মেধা যাচাই পদ্ধতির প্রতি আস্থা হারাবে। সর্বোপরি চিড় ধরবে রাষ্ট্রের স্তম্ভে। তাই শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ, শিক্ষার্থীদের বাড়তি মানসিক চাপের মধ্যে ঠেলে না দিয়ে, লাজলজ্জা ও ভীতি ভুলে শস্যের ভূতকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসুন। পুরস্কার যদি নিজেদের মানুষই পায় ক্ষতি কী?
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি