মাদক সকল সভ্যতাতেই ছিল। কোনও রাষ্ট্রই কোনও কালে মাদকের পীড়ন মুক্ত ছিল না। বাংলাদেশও নয়। গাঁজা, আফিম, হিরোইন, প্যাথেড্রিন, ফেন্সিডিল, টিকটিকির লেজ পেরিয়ে এসে শিসা ও ইয়াবায় আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি। ইয়াবার বিস্তার যেকোনও মাদকের চেয়ে ভয়াবহ। অন্যান্য যেকোনও মাদক গ্রহণের সময় আশপাশের মানুষেরা আঁচ করতে পারে। কিন্তু ইয়াবা একটি ট্যাবলেট মাত্র। এর সেবন যেকোনও মাদকের চেয়ে সহজ হওয়ায়, গ্রহণের মাত্রা ও পরিমাণ বেড়েছে। বলা হচ্ছে—কোনও কোনও পেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা রাত জেগে থাকতে বা দীর্ঘক্ষণ কাজের উদ্দীপনা পাওয়ার লোভে ইয়াবা সেবন করছে। যদিও তাদের এই উদ্দীপনা ক্ষণিকের মাত্র। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে। হারিয়ে ফেলে কর্মক্ষমতা।
দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে আনুষ্ঠানিকভাবে। সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন মাদকবিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করছে। গুণীজন, তারকা-শিল্পী-কুশলীরাও মাদকবিরোধী অভিযানে যুক্ত হচ্ছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও মাদকবিরোধী নানা উদ্যোগ ও অভিযান চলছে, তবুও মাদক আরো কঠোরভাবে আঁকড়ে ধরছে কেন আমাদের? আমরা কেন মাদকের জাল ছিঁড়ে বেরোতে পারছি না। মাদকের চোরাচালান ও এর বাণিজ্যিক প্রসারও বাড়ছে কেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যাবে, পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যেই আন্তরিকতা ও সততার ঘাটতি আছে। দেশি-বিদেশি অনুদান খরচ করার জন্য সরকারি-বেসরকারি সংগঠন মাদকবিরোধী অভিযানের আয়োজন করছে। যারা আয়োজক তারাও মাদক থেকে দূরে নয়। তারকা ও গুণীজন যারা মাদককে না বলতে বলছেন, তারা নিজেরাও ব্যক্তিগতভাবে মাদকে অভ্যস্ত। কেউ কেউ মাদকসহ পুলিশের কাছে আটকও হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যতটা মাদক আটক করছে, তারচেয়ে বেশি অভিযোগ তাদের কতিপয় সদস্য ও কর্তা মাদক চোরাচালান ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মাদক চোরাচালানে রাজনৈতিক নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত থাকা, প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি এখন খোলামেলা। এই বাস্তবতায় মাদক নিয়ে আমাদের লোক দেখানো বা দেশ দেখানো সব উদ্যোগই ভেস্তে যাচ্ছে। পরিণাম হিসেবে রাষ্ট্র পাচ্ছে ঝিমিয়ে পড়া প্রজন্ম, অক্ষম জনশক্তি। মাদকের বিরুদ্ধে সব নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রের প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। পুরো রাষ্ট্রকেই একযোগে মাদককে না বলতে হবে। সেই সক্ষমতায় রাষ্ট্রের কোনও খাদ নেই বলে বিশ্বাস রাখতে চাই।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি