যে অনলাইনগুলোর কথা বলা হলো, এগুলো রাজধানী থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বা হয়েছিল জাতীয় পরিচয় নিয়ে। রাজধানী থেকে আরও শত শত অনলাইন সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে, যেগুলো পাঠকের চোখে পড়ে না। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠাননির্ভর সেসব অনলাইন পত্রিকা। এর বাইরে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে অনলাইন সংবাদপত্র। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাগুজে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণও।
শুরুতেই বলছিলাম, সুদিন কমে গেছে অনলাইন পত্রিকার। তার মূল কারণ পাঠকের মধ্যে বিভ্রান্তি ও সংশয় তৈরি হওয়া। অনলাইন পত্রিকার বিস্ফোরণের ফলে এই মাধ্যমের সাংবাদিকতায় কপিপেস্ট কৌশলের অনুশীলন শুরু হয়। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে গুজব বা গসিপ প্রতিবেদন প্রচারের হিড়িক পড়ে। এই অনুশীলন থেকে বাদ পড়েনি প্রথম শ্রেণির অনলাইন পত্রিকার কোনও কোনোটিও। সঙ্গে আছে মতলবের খবর ছাপানোর অভিযোগ। যেহেতু অনলাইন পত্রিকার প্রচার ও প্রসার অনেকটাই নির্ভর হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ওপর, সেহেতু চটকদার বা ‘সেক্স’ নির্ভর খবরের প্রতি অনলাইন সংবাদপত্রগুলো বেশি ঝুঁকে পড়ে ‘লাইক’-এর নেশায়।
ফলে অনলাইন সংবাদপত্রের দায়িত্বশীলতা, নৈতিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে পাঠক মনে সংশয় তৈরি হয়। অনলাইন সংবাদপত্র হারায় তার কৌলীন্য। টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণে ভিডিও পোর্টাল যুক্ত থাকায়, পাঠক মনোযোগ সেদিকে সরে যায়, যাচ্ছে। কাগুজে পত্রিকাগুলোও যোগ করছে ভিডিও উপকরণ। ফলে মূল যে অনলাইন সংবাদপত্র, তার ভোক্তা অটুট থাকছে না। থাকবে কী থাকবে না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে পাঠক পর্যবেক্ষণ করে আমার মনে হয়েছে, পাঠকেরা এসব হুড়োহুড়িতে নেই। পাঠক বলতে, বলতে চাইছি যারা খবর ও খবরের বিশ্লেষণের ভোক্তা, তাদের কথা। মুড়ি-মুড়কি খবরের ভোক্তারা আগেও চলতি পথে ‘টেলিগ্রাম’ চেয়ে নিতো হকারের কাছ থেকে, এখন চোখ বুলিয়ে নেয় সেই মেজাজ ও চরিত্রের অনলাইন পত্রিকায়।
সুদিন নেই তাদেরই, যারা ‘লাইক’-এর বিনিময়ে বিসর্জন দিচ্ছে পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা ও কৌলীন্য। সেদিক থেকে হাজারো অনলাইনের ভিড়ে বাংলা ট্রিবিউন তার কৌলীন্যে শ্যাওলা পড়তে দেয়নি বলে অভিনন্দনের দাবিদার। একইভাবে খবরের তাৎক্ষণিতা ও আস্থা রাখার দিক থেকেও বাংলা ট্রিবিউনের উজ্জ্বলতা বেড়েছে। তবে অস্বীকার করার জো নেই, রাষ্ট্র ও সামাজিক দূষণের প্রভাব কখনও কখনও তার ওপরও পড়ে। সেই প্রভাব থেকে বাংলা ট্রিবিউন নিরাপদ থাকুক।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি