মহাসড়ক ধরে যখন ঢাকায় ফিরছিলাম, তখন পথে পথে আটকা পড়তে হয়েছিল অনির্ধারিত যানজটে। সড়কের উন্নয়ন কাজ যেখানে হচ্ছিল, তাতো মোটামুটি জানা, কিন্তু অন্যত্র হঠাৎ আটকে থাকা কেন? দুই-একটি জায়গায় বাস-ট্রাক, নসিমন-করিমনের ঝামেলা যানজটের কারণ, একথা সত্য। কিন্তু তারচেয়েও বেশি সত্য সরকারি-বেসরকারি দফতরের যানবাহনের আয়েসী চলা, উল্টো পথ ব্যবহার এবং অহেতুক ব্যক্তিগত কাজে ওই বাহনগুলোর পথ আটকে বসে থাকা। ওই সময় ট্রাফিক পুলিশের অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। মহাসড়কে দুই-একটি যানজটের জটলার রহস্য খুঁজতে গিয়ে তেমন অভিজ্ঞতাই হলো।
ঢাকায় ফিরে বিভিন্ন এলাকায় ছুটতে হচ্ছিল ব্যক্তিগত ও দাফতরিক কাজে। গতকাল ছিল রমজানের দ্বিতীয় শুক্রবার। বিপণী-বিতান ঘিরে মানুষের ঢল। প্রথম শুক্রবার পহেলা রমজান হওয়ায় কেনাকাটা শুরু করেননি ক্রেতারা। কাল (২৫ মে) মোটামুটি অনেকেই মার্কেটমুখী হয়েছিলেন। সক্ষমতা বাড়ায় ব্যক্তিগত ও ভাড়া গাড়ি ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম নয়। তাই প্রতিটি মার্কেট ঘিরে রেখেছিল গাড়ি। মার্কেটের সামনে দুই সারি করে গাড়ি রাখায় সব সড়কেই কম-বেশি বড় যানজট তৈরি হয়েছিল। যাত্রীরা মাঝপথে গাড়িতে উঠছিলেন, নামছিলেন। ট্রাফিক পুলিশ, সার্জেন্ট, ইনস্পেক্টর, সহকারী কমিশনার মিলিয়েও রাস্তা হালকা করতে পারছিলেন না। অনুরোধ, উপরোধ, ধমক দিয়েও কোনও কোনও গাড়িকে সরানো যাচ্ছিল না। উল্টো বিভিন্ন গাড়ি থেকে তাদের ওপর চড়াও হচ্ছিলেন যাত্রীরা। যেন মাঝরাস্তায় গাড়ি রাখা তাদের অধিকার। দুই-একজন হর্তাকর্তার চোখ রাঙানি যে দেখলাম না, তা নয়। এর মাঝে সংবাদপত্র, টেলিভিশনের স্টিকার বা সাংবাদিক লেখা বাহনও দেখলাম। খবর সংগ্রহে নয়, ব্যক্তিগত কেনাকাটার জন্য আসা। সবাই বেশ দাপুটে। দুর্বল কেবল ট্রাফিক। এক বড় আকারের বিপণী-বিতানের চারমুখেই বড় জটলা। বলা যায়, চার সারি করে গাড়ি রাখা। ওই মার্কেটে আসার সব সড়কের মুখেও যানজট। চার সড়কের মাঝে দুই প্রান্ত আছে দু’টি ট্রাফিক ছাউনি। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ জটলা বেঁধে বসে আছেন কয়েকজন কর্তাকে নিয়ে। বসে বসে যানজট দেখছেন। সব কিছু করার উপায় হারিয়ে বসে থাকা। এরমাঝে একজন কর্তার কাছে তার ওপরের কর্তার ওয়াকিটকি বার্তা এলো। জানতে চাওয়া হয়েছে—কেন জট লেগে আছে। কর্তা ওপরের কর্তাকে জানালেন—‘স্যার সব রকম চেষ্টা করলাম। সরকারি গাড়ি তো আমাদের কথা শোনে না। তবু আমরা আবার নামছি স্যার।’
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি