অথচ বাংলাদেশে ঠিক উল্টো চিত্র। আমরা নিজেরা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ইংল্যান্ড বলে চিৎকার করে যাচ্ছি। কোন দেশ কেমন খেলে জানি না কিন্তু সেই দেশ নিয়ে মাতমের শেষ নেই। বাড়ির ছাদে, বারান্দায় একাধিক দেশের পতাকা উড়াচ্ছি। জার্সি পরে শুধু খেলাই দেখছি না, অফিসও করছি। সন্তানকেও ভক্ত করে তুলছি ওই দেশগুলোর। সন্তানদের ফুটবলে অনুরক্ত করতে হবে ঠিক, ভালো-দুরন্ত খেলোয়াড় চিনবে সন্তান, তারও প্রয়োজন আছে। তাই বলে অজানা, অজ্ঞাত দেশের পতাকা নিয়ে মাতামাতি কেন? আমাদের মেয়েরা টি-টোয়েন্টিতে ক্রিকেটের বিশ্বকাপে গেলো, এই আনন্দে আমরা বাংলাদেশের পতাকা কত দীর্ঘ করেছি? বাড়িতে কি নিজ দেশের পতাকা উড়ালাম? সন্তানকে পরিয়েছি বাংলাদেশের জার্সি? ছেলেদের ক্রিকেটের সময় গ্যালারিতে পতাকা ওড়ে। বাড়িতে নয়। কারও কারও পরিবারে জার্সি হয়তো পরা হয়, কিন্তু সেটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার তুলনায় খড়কুটোও নয়। আমাদের মেয়েরা ফুটবলে এশিয়া জয়ের পরেও আমরা বাংলাদেশের পতাকা মমতা ও গৌরবে কতটুকু জড়ালাম? সন্তানদের কাছে সেই সাদাকালো-আকাশী পতাকা বা জার্সির দিনের কথা কি বলেছি? আমাদের দেশেও মোহামেডান, আবাহনী, শেখ রাসেল, শেখ জামাল, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ, ফকিরাপুল ফুটবল খেলে। আমাদের সন্তানদের সেই কথা কতজন জানিয়েছি? আমাদের ফুটবলের সুদিন নেই। এই অভিযোগের ছুঁতো তুলছি, কিন্তু মাঠে গিয়ে যদি আবার সাদাকালো বা আকাশি জার্সির পাশে দাঁড়াই, তবে ফুটবল আবার ফিরে পাবে সুদিন। কিন্তু সেই তাড়না আমাদের নেই।
আমাদের মাঝে যে পরদেশ বা ভিনদেশপ্রীতি রয়েছে। তা এখন আমরা সন্তানদের মাঝেও বুনে দিচ্ছি। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য– ইতিহাসই এখনও ঠিকঠাক মতো জানাতে পারিনি। আছে নানা বিভ্রান্তি। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার কোনও বিকল্প নেই। সন্তানদের জানাতে হবে, ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশের সে যে একজন যোগ্য প্রতিনিধি। বাংলাদেশের যেকোনও অর্জনে আমাদের পতাকা তুলে ধরতে হবে। আমরা দেশের মাটিতে বা প্রবাসে যেখানেই থাকি না কেন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের গৌরবের কথা তুলতে হবেই। এই যে আমাদের যে ছেলেটি গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণজয় করে এলো, তার গৌরবের অংশীদার হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো বাংলাদেশের পতাকা ভেসে বেড়াতে দেখছি না। আপাতত জাওয়াদ চৌধুরীর সাফল্যে উড়ুক আমার পতাকা। কারণ ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশের ও একজন যোগ্য প্রতিনিধি।
জয়তু বাংলাদেশ।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি