তিন শহরেই ভোটার ও গণমাধ্যমের নজরের কেন্দ্রে আছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী। সিলেট ও রাজশাহীতে সাবেক মেয়ররাই পরস্পরের মুখোমুখি। বরিশালে আওয়ামী লীগে নতুন মুখ আছে। মুখ নতুন হলেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক তার সঙ্গেই থাকছে। দুই প্রধান দলের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও বাম দল আছে। রাজশাহী ও বরিশালে গণমাধ্যমে বাম দল সরব। মাঠে জাতীয় পার্টি সক্রিয়। জোটের বাইরে গিয়ে ভোট করছে জামায়াত। স্থানীয় রাজনৈতিক মেরুকরণ হচ্ছে প্রতিদিনই। তারপরও ভোটের শেষ হিসাব মেলাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোট নিয়েই বসতে হবে। এই দুইয়ের বাইরে কেউ তিন নগরে নির্বাচিত হবেন, ভোটের ব্যাংক ও ভাসমান হিসাবে সেই কথা বলছে না।
খুলনা, গাজীপুর নগর নির্বাচন এককভাবেই জাতীয় রাজনীতির প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছিল। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পেশাজীবী নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত হয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিল, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়েও। রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল নিয়েও একই কাণ্ড ঘটছে। নির্বাচন কমিশন তাদের দিক থেকে নানা রকম সতর্কতা জারি করেও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। আর প্রার্থী ও দল তো পরস্পরের বিপক্ষে নালিশ করেই যাচ্ছে। মেয়রদের নিয়ে এত হৈ হুল্লোড়ের মধ্যে আলোচনার বাইরে বরাবরের মতো কাউন্সিল প্রার্থীরা। সিলেট, রাজশাহীর সব ওয়ার্ডে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর প্রার্থী থাকলেও, বরিশালে সব ওয়ার্ডে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। কাউন্সিলরদের একটি অংশ দলের মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে একযোগে প্রচারে থাকলেও বেশিরভাগই আলাদা প্রচারে ব্যস্ত।
ভোটে যারা অংশ নিচ্ছেন, তিনি মেয়র প্রার্থী হোন কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থী, পারস্পরিক সৌহার্দ্য বজায় রেখে তারা প্রচারণার মাঠে আছেন। সাবেকরা নিজেদের পূর্ব আমলনামার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও দলের আমলনামার তুলনা ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন। গণমাধ্যম ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত সংলাপে পাশাপাশি বসেও মার্জিত ছিলেন তারা। প্রচারণার মাঠে বলার মতো কোনও সহিংসতা হয়নি। এই লক্ষণগুলো থেকে ভোটারদের পূর্বাভাস পাওয়ার কথা ছিল, তারা একটি সুন্দর ভোট উৎসবের দিন পেতে যাচ্ছে। তারপরও তাদের মনে শঙ্কা, ভোটের দিনটি কি তাদের হবে? এই শঙ্কা কেবল যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতের ভোটারদের, তা নয়। আওয়ামী লীগের ভোটারদেরও শঙ্কা একই। শঙ্কার কারণ ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। রাজশাহীতে বন্ধ হয়ে গেছে বিএনপির সব নির্বাচনি ক্যাম্প। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর একচ্ছত্র পোস্টারের সয়লাব রাজশাহী। বিএনপি-প্রার্থীর কর্মীরা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। বিএনপিকর্মীদের ধরপাকড়ের খবর পাওয়া গেছে বরিশাল থেকেও। সিলেটও এর ব্যতিক্রম নয়। তিন নগরীতেই নির্বাচন কমিশনের চেয়ে পুলিশ বেশি সক্রিয়। পুলিশ সরকারি দলের চেয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বেলায়ও বেশি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে বলে অভিযোগগুলো গণমাধ্যমে এসেছে। ভোটের কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকে নগরের পরিবেশ এমন শঙ্কিত ও ভয়ার্ত করে তোলায়, ভোটের আবহাওয়ায় বজ্রপাতসহ ঝড়ের পূর্বাভাস তো দেখতেই পারেন ভোটাররা।
ভোটারদের কথা তাদের কথা-রাজনৈতিক দলগুলোর যদি নিজেদের ওপর আস্থা থাকে। উন্নয়ন, সুশাসন নিয়ে যদি তাদের নিজেদের মধ্যে সংশয় না থাকে, তবে ভোটারদের ওপরই তাদের ভরসা রাখতে হবে। তিন নগর ঘুরে এসেছি সপ্তাহখানেক আগে। কথা বলেছি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে। আগেই বলেছি মেয়র প্রার্থীরা একজন ছাড়া সবাই পুরনো মুখ। তাদের কেউই চান না, ভোটের দিন ভোটার পরাজিত হোক। ভোটারের জয় হলে রাজনীতির জয় হবে বলে তারাও বিশ্বাস করেন। এই বিশ্বাসের পরও কেন ভোটের আবহাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকবে? অতীতের ঝড় ঝাঁপটা ঝেড়ে ফেলে ভোটের দিন তিন নগরই ভোট উৎসবে মেতে উঠবে, এই আশা রাখতে চাই। জানি এই ‘আশা’ই একদিন প্রত্যাশার জনপদে পৌঁছে দেবে।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি