পরিচিতজনদের এই পর্যবেক্ষণ নীরিক্ষা করতে নিজেও ছোট পর্দা খুলে বসেছিলাম। খবরের চ্যানেল টপকে টপকে গেছি দেশি মিশেল চ্যানেলে। সেখানে মেন্যুতে বিনোদনের ঠাসাঠাসি আয়োজন। নাটক, ধারাবাহিক দেখলেই থেমে যাই। মনোযোগী হই সংলাপ ও অভিনয়ে। দেখতে বসা হয়েছিল সপরিবারে। তাই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শারীরিক ভাষা যখন আরোপিত অশ্লীলতায় চলে যাচ্ছিল, সংলাপে যখন স্বস্তা যৌনতার আভাস, তখন তো দৌড় না দিয়ে উপায় নেই। তিনদিন মোটামুটি দৌড়ের ওপরই ছিলাম। এক-দু’টি যে দেখার মতো হয়নি, তা বলে অপরাধী হতে চাই না। কিন্তু এত্ত এত্ত চ্যানেলের গামলা ভর্তি নাটক, টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিকের মধ্যে এক-দু’টি থেকে কেন বিনোদন খুঁটে নিতে হবে? একখানা-দুইখানা কেন দর্শককে ভাবাবে? বোঝা গেলো, যারা লিখছেন তাদের সমাজ পর্যবেক্ষণ নেই। সাহিত্য-দর্শন থেকে দূর-দুরান্তে আছেন তারা। কারও কারও হয়তো ভনিতা আছে সাহিত্যঘনিষ্ঠতার। দৃশ্যমান ঘোরাঘুরি আছে সাহিত্যের উঠোনে। মস্তিষ্কের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটেনি। দুই-একজনের সব সক্ষমতা থাকার পরেও, নিজেকে তারা বাজারের কাছে ছেড়ে দিয়েছেন। বাজার এত সুলভে পণ্য দাবি করছে যে ‘পচা’ পণ্য সরবরাহ করা ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় থাকছে না।
আর নির্মাতা? টেলিভিশনের সময় ভরিয়ে দেওয়ার জন্য কেউ কেউ কাজ করে যান। তারাও নির্মাতা। মাটি ভরাটের মতো সময় ভরাট। এই ভরাট কাজটি কি আবর্জনা দিয়ে করা হচ্ছে, না মাটি বা বালি দিয়ে করা হচ্ছে, সেদিকে নজর নেই। ভরাট সময়টিতে বিজ্ঞাপণ বুনে দিলেই তো ব্যবসা।
ওই যে বলছিলাম, এক-দুটি সত্যি, ভিন্ন চিন্তা ও বিষয়ের নাটক হয়েছে। সেখানে বিনোদন কম থাকলেও গল্প বলার ঢঙ অসাধারণই ছিল। কিন্তু আবর্জনার ভাগাড় থেকে এই রত্ন খুঁজে বের করার সময়-সুযোগ কই ভোক্তাদের? আর একটি শিল্পের মান যাচাই বা নির্ণয় করার জন্য একটি-দু’টি নাটক বা সিরিয়াল তো বিবেচ্য হতে পারে না। শিল্প টেকসই হওয়ার জন্যও এই প্রবণতা পুষ্টিকর নয়। আমাদের টেলিভিশন নাটক ও অনুষ্ঠান মানের অবনমন হচ্ছে, এই পূর্বাভাস-আলোচনা, অভিযোগ চলছে একদশক ধরেই। কিন্তু মান উন্নয়ন, ধরে রাখার কোনও কার্যকর উদ্যোগ কোনও কূল থেকেই আসছে না। টেলিভিশন, নির্মাতা, কলাকুশলী সবাই বাজারে হণ্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। বেচাকেনায় উন্মাদ এই পক্ষগুলো একসময় দেখবে বাজারে সওদা আছে ভোক্তা নেই। সেই দিন এসে গেছে বেশ আগেই। এখন ভোক্তা শূন্য হওয়ার পথে। সেই দিন কত কাছে, সেই আতঙ্কেই আছি।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি