১৯৯১’র পর ১৯৯৬, ২০০১,২০০৮, ২০১৪ হয়ে ২০১৮ এই পথটুকু আসতে গিয়ে দেখতে পেলাম– কিভাবে রাজনীতিবীদরা কোণঠাসা হয়ে পড়লেন। রাজনৈতিক দলের ইশতেহার থেকে মানুষ কত দ্রুত হারিয়ে গেলো। এখন আদর্শ হচ্ছে ক্ষমতার আনুগত্য। মানুষের চিন্তার মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি এখন প্রতিপাদ্য নয়। অস্বীকার করবো না মানুষের স্বচ্ছলতা আসেনি। এসেছে। কিন্তু আমরা যে উন্নয়নের কথা বলছি, যে স্বচ্ছলতার কথা বলছি, সেখানে সাম্যতা আসেনি। এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণির দূরত্ব বেড়েছে বিস্তর। মধ্যবিত্তকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে জনাকতেককে উচ্চতে তুলে নেওয়া হয়েছে। বাকিরা নিম্নগামী। কিন্তু অর্থনীতির গড়সূচকের শুভঙ্করের ফাঁকিতে মাথাপিছু আয় কিন্তু ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে।
সরকারের প্রণোদনা ছিল,আছে। পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় কিছু উন্নয়ন হয়েছে যেমন। রাজনৈতিক দলগুলো স্বপ্রণোদিত হয়েও কতিপয় উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে ব্যক্তি উদ্যোগ। সেটা একাত্তর পরবর্তী সময় থেকেই।
দিনে দিনে সেই উদ্যোগে প্লাবন আনে তরুণেরা। এগিয়ে আসেন নারীরা। হুমকি, ফতোয়ার চোখ রাঙানিকে বৃদ্ধাঙুলী দেখিয়ে মেয়েরা একের পর এক বাঁধ ভেঙে চলেছে। চাকরির বাজারে শ্রমবাজারে ঢুকছে ২০ লাখ তরুণ। শিল্প ও উন্নয়নের বাজার চওড়া হলেও, বেকারত্ব বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
আমাদের চাকরির বাজারে বিদেশিরা ভাগ বসিয়েছে উপদেষ্টার মোড়কে মোড়লগিরি করার নামে। ফলে তরুণরা যথাযথ যোগ্যতা হওয়ার পরেও এক জায়গায় গিয়ে তাদের থেমে যেতে হচ্ছে। নেতৃত্বের জায়গায় তাদের আসন অনিশ্চিত। বেসরকারিখাতে যেমন হতাশা তৈরি হয়েছে। তেমনি সরকারিখাতেও কোটার বেড়াজাল আছে। হতাশা চাকরির বাজারে প্রবেশের আগে থেকেই তৈরি।
একাত্তর পরবর্তী সময়ে আমরা শিক্ষার একটি সুশৃঙ্খলনীতি তৈরি করতে পারেনি। পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট রকমারি নীরিক্ষা করছি। উচ্চশিক্ষাকে পণ্য হিসেবে বাজারে তুলেছি। মনোযোগ দেইনি কারিগরি শিক্ষায়। দক্ষ জনবল তৈরিতে আমাদের উদাসীনতা রয়ে গেছে।
তারপরও আমাদের তারুণ্য এখনও লড়াকু। এখানে হয়তো আমরা কিছু তরুণ মুখকে দেখি হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু বড় একটি অংশ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালেই রাজপথে কিশোর কিশোরীরা তা দেখিয়েছে। তরুণদের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হতে দেখেছি– চাকরি করবো না চাকরি দেবো। সুতরাং ১৯৭১ থেকে ২০১৮। জমা খরচ মেলাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কিন্তু দেখছি-আমরা বিজয়ের পথেই আছি। বিজয়ের ফুল ফুটছে বাংলার পথে প্রান্তরে। এখন সেই ফুল দিয়ে মালা গাঁথার উদ্যোগ নিতে হবে মাত্র।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি