ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ইশতেহারের গুরুত্ব রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রার্থীর ইশতেহার জানার জন্যও আমার আগ্রহ থাকে। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার জন্য বা ভোটের অলঙ্কার হিসেবে ইশতেহার ঘোষণা করে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সময় দল ঘোষিত অঙ্গীকারের কথা প্রার্থী ও কর্মীদের অধিকাংশেরই অজানা থাকে। তারা এই বিষয়ে আগ্রহীও হন না খুব একটা। নিজ আসনে কোন কৌশলে ভোটে জিতবেন, সেই ছক কষতেই মনোযোগী থাকেন বেশি। ফলে দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে, নাগরিকদের জন্য যে ইশতিহার তৈরি করা হলো, তার সঙ্গে তাদের আত্মীক সম্পর্ক থাকে না। থাকে না বলেই ভোট পরবর্তী সময়ে ঘোষিত ইশতেহারের পাতা উল্টে দেখা হয় কমই। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই কতিপয় রাজনৈতিক কৌশল, স্বার্থ আছে। সেই স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে যতটুকু দরকার, ইশতেহারের সেই যৎসামান্য অংশটুকুই তারা বাস্তবায়ন করে। এই বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্য থাকে প্রতিপক্ষ দলটির সঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক তফাৎকে স্পষ্ট করা।
এর বাইরে যে ইশতেহারের বিশাল ফিরিস্তি সেখানে ধূলো জমে যায়। আড়ালে পড়ে যায় ক্ষমতার অহংবোধে। ভোটে আবার সেই প্রতিশ্রুতিগুলো দফা হিসেবে উঠে আসে। প্রতিবারই ইশতেহারের প্রতিপাদ্য বা শিরোনাম বদল হয়। হয়তো দুই একটি বাক্য জনতার মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। যেমন এবার ঘুরে বেড়াচ্ছে– পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া অন্য সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা থাকবে না। বলা যায়, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির যৌথ ইশতেহার এটি। এই প্রতিশ্রুতি কতটা বিশ্বাস আর কতটা বিস্ময় থেকে জনমুখে, তা ভোটের বাজারই ভালো জানে।
জনগণ তার ন্যূনতম চাহিদার দেখা পেয়েছে। পথঘাট হয়েছে। বিদ্যুতের দুর্বিষহ দিন ফুরিয়েছে। বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা। সরকারের প্রণোদনায় বেড়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা। যদিও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য যে লালন-পালন, সেখানে ঘাটতি রয়ে গেছে অনেকটাই। কারণ সরকারকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ‘বোয়ালদের’ টাকা জোগান দেওয়ায়। এই বোয়াল পুষতে হয়েছে আগের সরকারগুলোকেও। বোয়ালেরা আরও হৃষ্টপুষ্ট হওয়াতে পুঁটি মাছেদের মধ্যে সঙ্গত কারণেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আগামীতে সরকারে দায়িত্ব যারা নেবেন, তাদের উদ্যোগ নিতে হবে বোয়ালদের মেদ ঝরানোর। পুঁটি মাছেদের মনে-চোখে যে ভয়, তা দূর করতে আন্তরিক হতে হবে। সবচেয়ে বড় কাজটি করতে হবে সরকারের নিজেদের স্বার্থেই। তা হলো–তারা যে উন্নয়ন করবেন, সেই উন্নয়ন যেন সাধারণ মানুষ আনন্দে উপভোগ করতে পারেন। সেই জন্য বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি অধিকারের উন্নয়নের প্রতি আগামী সরকারকে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবেই। এটিই ভোটার বা আমজনতার পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিবেদিত ইশতেহার।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি