ভাবনায় আছি সরকারকে নিয়েও। ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে। নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান সাধারণের আড়ালে নয় দৃশ্যমান। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে জুডিশিয়াল সার্ভিসসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। যেটা আগে কখনও ছিল না। প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে নারীদের উন্নয়নে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নেয়। এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নিয়ে সেটিও বাস্তবায়ন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মেয়াদে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন– শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন ছাত্রীরা পিছিয়ে না থাকে সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়নের পরও নারীদের সমান অধিকার দিয়ে গেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের সরকার নারীদের শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ নারীদের শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত না করলে দেশ এগিয়ে যাবে না। আওয়ামী লীগ তাদের বিগত মেয়াদে উপবৃত্তি, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং অবৈতনিক শিক্ষা দেওয়ার ফলে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাত্রীদের স্কুলে ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত হয়েছে। নারীর উচ্চশিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়। নারীর শিক্ষা আমরা যদি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহারে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো ৩.১২ অনুচ্ছেদে নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে– বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ’ এবং রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ পরিকর। নারীর প্রতি সকল বৈষম্যমূলক আচরণ/প্রথা বিলোপ করা হবে। বাল্য বিবাহ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আলাদা ব্যাংকিং ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
সরকার যখন নারী শিক্ষা ও নারীক্ষমতায়নে বদ্ধ পরিকর তখন আহমদ শফীর এই বক্তব্যকে তারা কিভাবে আমলে নেবেন? আহমদ শফীর এধরনের বক্তব্য সমাজের কট্টর অংশকে প্রভাবিত যে করবে একথা অস্বীকার করা যাবে না। শুধু যে হেফাজতে ইসলামে অনুসারীরাই এই বক্তব্য মানবে তা নয়। প্রকৃত ধর্ম শিক্ষা থেকে দূরে আছে যে জনগোষ্ঠী, তারাও এই বক্তব্য অনুসরণ করতে পারে। হয়তো তারা মেয়ের শিক্ষাকে ক্লাস ফাইভে থামিয়ে দেবে না। উপবৃত্তি বা অন্যান্য সুবিধা ভোগের লোভে এসএসসি পর্যন্ত গিয়েই বাঁধ তুলে দেবে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাবা’র বাড়ি, স্বামীর বাড়িতে লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রণোদনা এখনও বিরল। এই বাস্তবতায় আহমদ শফীর এই বয়ান নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে সরকারের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল।
তবে আমরা যারা অভিভাবক, তারা কন্যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চাই সরকারের ইশতেহার পাঠ করে। আহমদে শফীর কাছে আমাদের কোনও প্রতিশ্রুতি নেই। রইলো প্রতিবাদ। আমরা এও বলতে চাই, আমাদের নারীরা ক্লাস ফাইভ টপকে এগিয়ে যাবে।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি