সেই ২০০৯ সাল থেকে হাইলি প্যাথজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু রোগের কারণে অব্যাহত ক্ষতির শিকার হয়ে আসছে বাংলাদেশে পোল্ট্রি খাত। এই শিল্প বাঁচাতে সরকার এর টিকা আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল যেন এই রোগ মুরগি থেকে মানবদেহে প্রবেশ করতে না পারে।
তবে এই রোগের একটি নিম্নস্তরীয় ভাইরাস আছে, যার নাম লো প্যাথজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এলপিএআই)। পোল্ট্রি শিল্পের বাইরের বেশিরভাগ মানুষই এ ব্যাপারে সচেতন নয়। এটি এইচপিএআইয়ের মতো মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে না। তবে এর কারণে মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সরকার এইচপিএআইয়ের টিকা আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এলপিএআইয়ের টিকার অনুমোদন দেয়নি। সরকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছে তারা যেন খামারের জৈব নিরাপত্তা বাড়িয়ে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নেন। এটা অবশ্যই সম্ভব, তবে এর জন্য স্বয়ংক্রিয় খাবার সরঞ্জাম লাগবে। কর্মীদের পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল সুবিধা লাগবে।
এদিকে আমরা বাজারে মুরগি ও ডিমের যে স্বল্পতা দেখতে পাচ্ছি তার কারণ হচ্ছে এলপিএআই টিকা না থাকা। আমাদের দেশের অনেক খামারিই এক হাজারের বেশি মুরগি প্রতিপালন করেন না। তাই এত কমসংখ্যক মুরগির জন্য জৈব-নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে শীতকালে জ্বরের মৌসুমে খামারিরা প্রায় সর্বস্বই হারিয়ে বসে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবেই মরে যায় সূর্যের তাপ আর অতি বেগুনি রশ্মির কারণে। তবে শীতকালে ওই তাপ ও রশ্মির উপস্থিতি কম থাকে বলে এলপিআইয়ে আক্রান্ত হওয়ায় মুরগির মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে শীতের জ্বরের মৌসুমের কারণে ২০১৮ সালের তুলনায় ডিম ও মুরগি সরবরাহ অনেক কমে গেছে।
পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এই সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এটা শুধু মূল্য নির্ধারণ করে সমাধান করা যাবে না। তবে সরকারি সংস্থাগুলো এই তড়িৎ সমাধানেরই প্রস্তাব দিচ্ছে। এর মূল সমাধান হতে পারে এলপিএআই টিকা আমদানির অনুমোদন দেওয়া। এতে করে ক্রেতার কাছে মুরগি ও ডিমের সরবরাহ বাড়বে। টিকার মাধ্যমে সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে দাম এমনিতেই স্থিতিশীল হয়ে আসবে।
পোল্ট্রি শিল্পের দিকে আঙুল না তুলে এবং দাম বাড়ানোর অভিযোগ না করে সরকারের উচিত এই রোগের কারণে যেই সমস্যা হয় তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা। টিকা নীতির সঠিক প্রণয়নই এই সমস্যা কাটিয়ে পোল্ট্রি শিল্পকে সহায়তা করতে পারে।
লেখক: পরিচালক, টুএ মিডিয়া লিমিটেড