যখন নুসরাত প্রতিবাদ করে পুড়ে যায়। বাস আমার সন্তানের শরীরকে ভাবে সড়ক পথ। চালক-হেলপারের যৌন লালসা থেকে বাঁচতে আমার বোনকে বাস থেকে ঝাঁপ দিতে হয়। আমার শ্রমিকের ঘাম বেচা টাকা উড়ে যায় কারো দ্বিতীয় নিবাসে। যখন গণতন্ত্রের দেশে ভোটকেন্দ্রে আসে ভোটারের জন্য অপেক্ষার মৌসুম। তখন আমি কী করে ভাবি সুদিন আসছে, সুদিন আসবে?
সত্যি নুসরাতের লড়াই না দেখলে কি ভরসা পেতাম? আবেগের উষ্ণতায় বলছি না। একটি মেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে যায়নি। পোড়া শরীর নিয়ে লড়াই করে গেলো নিপীড়কের বিরুদ্ধে। তার প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে ছিল নিপীড়কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং শাস্তির দাবি। নুসরাতই বলে গেলো, সুদিন আসছে।
তারপরও সুদিন আসছে বলে ভরসা রাখতে পারি না। যখন দেখি বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার সঙ্গে জড়িত মানুষেরা আসমানে মেঘ রোদ দেখে রঙ বদলায়। সংস্কৃতিকর্মীরা কেনা দাস। শিক্ষকরা অন্ধকার বাতিঘরে। পদ-পদবি-পদকের লোভে নতজানু পেশাজীবীরা। রাজনীতিতে দুর্লভ রাজনীতিবিদ। বণিকেরাই রাজনীতির নীতিনির্ধারক। দীর্ঘশ্বাসের চিমনি গিয়ে আকাশে ঠেকলো বুঝি। তারপরও মনে হয়, বিশ্বাস রাখার সাহস জাগে- সুদিন আসবে। কারণ আমাদের সন্তানেরা তাগাদা দিচ্ছে রাষ্ট্র মেরামতের। আমরা নানা ছুঁতোয় মেরামত কাজে হাত দিচ্ছি না। প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি ব্যাংক লুটপাটের, দফতরে দফতরে দৃশ্যমান- আড়ালের দুর্নীতির। আমরা সইয়ে যাচ্ছি রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমাদের তরুণ শক্তিকে বিকলাঙ্গ করার নীল নকশা। কিন্তু খুব বেশি দিন কি সইতে পারবো? না,নুসরাত আরেক দফা তাগাদা দিয়ে গেলো- বাংলাদেশ তোমার মেরামত জরুরি। সন্তানরা যখন একাট্টা, আমরা খুব বেশি সময় হাত গুঁটিয়ে বসে থাকতে পারবো না। মেরামতের কাজে হাত দিতেই হবে। না হলে মেরামতের দায়িত্ব ওরাই নিয়ে নেবে। অতএব হৃদয়ের গহিন থেকেই বলতে পারি সুদিন আসবেই। শহরের দেয়াল মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছে না।
এই সুদিন কোন রথে চড়ে আসবে? পুরনোতে আস্থা নেই। ছিল না কোন কালেও। সুদিন নিজেই খুঁজে নেবে নতুন। যার ভাবনায়, বোধে-চিন্তায় নিত্যনতুন পাতার অঙ্কুরোদগম হয়, সেই তো নতুন। বয়সের বিচারে নতুন-পুরাতনকে নিক্তি দিয়ে মাপা যাবে না। বয়সে নবীনও চিন্তায় বার্ধক্যের জড়তায় জড়সড় থাকে। আবার প্রৌঢ়ত্বের সীমানায় পৌঁছেও কত মানুষই না গাঢ় সবুজ হয়ে আছেন। পৃথিবী, সমাজ এবং নিজেকে নতুন ভোরের মতো দেখছেন। এমন নতুনে ভর করেই সুদিন আসছে। এই অল্প কয় দিনেই দমকলকর্মী সোহেল রানা, ফেনীর নুসরাত জানিয়ে গেলো আসছে নতুন। একজন পলান সরকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বীজ রোপণ করে এসেছিলেন। আরও কত পলান সরকার যে বীজ রোপণ করে যাচ্ছেন, আমরা কাউকে জানি, কাউকে জানি না। সেই বীজ থেকে সবুজ উঁকি দিচ্ছে, সেই সবুজ দেখার চোখ তৈরি করতে হবে ১৪২৬-এ। সত্যি বলছি সুদিন আসবেই।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি