বলছিলাম ব্যক্তির অসংযমের কথা। সামগ্রিকভাবে সমাজ এবং রাষ্ট্রও কি সংযমের গণ্ডিতে থাকে? মোটেও তা নয়। আমরা দেখতে পাই রমজান আসার আগে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। পণ্যের উৎপাদক ও বিতরণকারীরা রমজান মাসজুড়ে বিলবোর্ডে ও গণমাধ্যমে নানারকম ধর্মীয় বাণী প্রচার করেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে জাকাত বিলি করেন। এতিম-দুস্থদের সঙ্গে ইফতার করেন, অন্যদিকে মুনাফা কামাতে বেছে নেন এই মাসটিকেই। মুনাফা করতে এক, দুই, পাঁচ টাকা বেশি নিয়েই ক্ষান্ত হন না। পণ্যে, খাবারে নকল-ভেজাল কম দিতেও দয়ালু হন না মোটেও। বরং ভেজাল-নকল চলে আরও ব্যাপকভাবে। নকল-ভেজাল প্রতিরোধে যে বিভিন্ন দফতর মাঠে নামে, তাদের বশে আনতে বরং ব্যবসায়ীরা উদারতা দেখান। শুধু যে খাবারে ভেজাল, উচ্চমূল্য তা নয়। কাপড়, জুতা থেকে শুরু করে সব ব্যবসায়ীই একটি মাস থেকেই বাকি এগারো মাসের মুনাফা তুলে নিতে উন্মাদনা দেখাতে থাকে। তাই রমজান মাস ধর্মীয় অনুশাসনমতো সংযমের মাস হলেও ব্যক্তি ও সমষ্টিগত অনুশীলনে আমরা সেই নীতি থেকে অনেক দূরে।
অথচ বিশ্বের অন্যান্য মুসলমান প্রধান দেশে রমজান প্রকৃত অর্থেই ত্যাগ ও সংযমের মাস হিসেবেই আসে। কোনও কোনও দেশে ব্যবসায়ীরা এই মাসে পণ্য কম দামে বিক্রি করেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ও সংস্থা তাদের সেবা আরও সহজ ও দুর্ভোগমুক্ত রাখার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আমরা চলছি উল্টো পথে। সমাজের কতিপয় মানুষ সচ্ছল হয়েছে ঠিক, কিন্তু সেই সচ্ছলতাকে হজম করার মতো শক্তি তারা সঞ্চয় করতে পারেনি। যারা বিত্তের আরও ওপরে তারাও বেসামাল হয়ে বারবার পিছলে পড়ছে। সবাই এখন দেখাদেখির দুনিয়ার মানুষ। কে কাকে টপকে যাবে ভোগের বেলায়, সেই লড়াই এখন তুঙ্গে। এই লড়াইতে কবে ক্লান্তি আসবে বলা মুশকিল। না আসা পর্যন্ত রমজান মানে সংযমের মাস। তা অনুভব করা, চর্চা করা মনে হয় হয়ে উঠবে না।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি