সম্প্রতি বিএসটিআই’র দেওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, নামি শিল্পগোষ্ঠীগুলোর ব্যাপক বিজ্ঞাপায়িত পণ্যের মানও সন্তোষজনক তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যের জন্যে বিপজ্জনক। বিজ্ঞাপন দেখে বা শিল্পগোষ্ঠী তথাকথিত সুনাম দেখে ক্রেতারা পণ্য কিনে শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, একই সঙ্গে তারা পকেটের টাকা দিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধি কিনে নিচ্ছেন। শিল্পগোষ্ঠীর পণ্যের মানেরই যখন এই হাল তখন ফুটপাতের সাধারণ খাবার বা পণ্যের কী হাল হতে পারে? কাপড় বা দেয়ালের রঙ দিয়ে জুস, খেজুর চকচক করে তোলার জন্য রঙ মাখিয়ে বিক্রি করা। সুপারশপে পচা মাছ, বাসি খাবার বিক্রি, রেস্টুরেন্টের নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি ও বিক্রি, এই অভিযোগের বাইরে কয়টি দোকান বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী আছে? উত্তর দেওয়া মুশকিল। এই যে বেনিয়া গোষ্ঠী নীরব ঘাতক হয়ে উঠলো, তা-তো একরাত্রিতে হয়নি। ধীরে ধীরে তারা এই সাহস সঞ্চয় করেছে। বিএসটিআই এখন ভেজাল ও নিম্নমানের তালিকা যে ঝুলিয়ে দিলো বা জানালো, এই ভূমিকা নেওয়ার নৈতিক অধিকার কি প্রতিষ্ঠানটির আছে? ঘুষের বিনিময়ে পণ্যের ‘মান’ সনদ দেওয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আছে। সনদ দেওয়ার পর বাজারে কতটা তদারকি বজায় রাখে তারা? পণ্যকে নিম্নমানের বলে চিহ্নিত করার পর তারা কি বাজার থেকে ওই পণ্য তুলে নেওয়ার কোনও নির্দেশনা দিয়েছে অভিযুক্ত উৎপাদককে? এমন নির্দেশনার কথা শোনা যায়নি। ফলে ওই পণ্যগুলো বিপণিগুলোতে এখনও বিক্রি হচ্ছে ক্রেতারা জেনে না জেনে ওই পণ্য কিনছেন। সিটি করপোরেশন ভেজাল নকলের বিরুদ্ধে অভিযান বা যুদ্ধে নেমেছে। তাদের স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা যদি নিয়মিত হোটেল রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করতেন, তাহলে পরিস্থিতি এতটা বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছাতো না। তারা পরিদর্শন করেন না এমন বলা যাবে না। তারা একটি বিনিময় চুক্তির আওতায় আছেন। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিও তাদের ছাড়পত্র পেয়ে যায়।
‘দুর্নীতি’কে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করায় আমাদের রাষ্ট্রীয় সংগঠন বা দফতরগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বেনিয়া গোষ্ঠী বলি বা অন্য সাধারণ ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের কথাই বলি কেউই এসব দফতরের প্রশ্রয় ছাড়া কোনও অনিয়ম বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। মাফ পাওয়া যাবে এমন একটি সবুজ সংকেতকে সামনে রেখেই বড় শিল্পগোষ্ঠী তাদের বাজারে কাটতি থাকা পণ্যে ভেজাল দিচ্ছে, আবার ছোট ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে খাবারে ভেজাল দিচ্ছে অথবা নকল পণ্য তৈরি করছে। এদের সবার মুনাফার একটি অংশ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা পাচ্ছেন। উচ্চ আদালত যথাযথই বলেছেন এই নকল ভেজাল প্রতিরোধে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যে ব্যর্থতা একটি জাতিকে রোগাক্রান্ত জাতিতে পরিণত করেছে। শিশু থেকে প্রবীণ সবাই আমরা দুরারোগ্য নানা জটিল পরিচিত ও অপরিচিত রোগের ঝুঁকিতে আছি। আক্রান্তের সংখ্যাও কম নয়, যা আচমকা মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠছে। এই যে হত্যা, গণহত্যা। এই হত্যাকারীরা তো এখন চিহ্নিতই। তাদের কি শাস্তির আওতায় আনা যাবে না,আনা কি খুবই কঠিন? ভেজাল-নকল খাবার ও পণ্যের অস্ত্র দিয়ে যারা মানব নিধনে নেমেছে তারা কতিপয় বেনিয়া গোষ্ঠী মাত্র। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সোচ্চার হওয়া কি খুব দুঃসাহসিক কাজ? উত্তর রয়েছে রাষ্ট্রের কাছেই। আমরা সাধারণ নাগরিকরা শুধু এই নীরব ঘাতকদের কাছ থেকে মুক্তি চাই। চাই তাদের শাস্তি।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি