শুভ জন্মদিন, বাংলা ট্রিবিউন

মো. জাকির হোসেনশুভ শুভ শুভ দিন। বাংলা ট্রিবিউনের জন্মদিন। আজ পঞ্চম বর্ষ পার করলো বাংলা ট্রিবিউন। পাঁচ বছর পেরুনো একটি সংবাদপত্রের জন্য খুবই অল্প সময়। বয়স বিবেচনায় বাংলা ট্রিবিউনের শৈশবকাল এখন। মানবসন্তানের মধ্যে কেউ কেউ অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। শিশু বয়সেই তার অসাধারণ প্রতিভার প্রশংসা মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বাংলা ট্রিবিউনও তেমনি শিশু বয়সেই অসংখ্য পাঠকের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। অনেককে বলতে শুনেছি, দিনে কয়েকবার বাংলা ট্রিবিউন না পড়লে কিছু একটা অতৃপ্তি থেকে যায়। প্রশ্ন হলো, কী দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন এত এত পাঠককে বশীকরণ করলো? বাংলা ট্রিবিউনের এমন কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে, যা দিয়ে প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদপত্রের প্রথম সারির অনেককে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ইতোমধ্যে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে অনলাইন সংবাদপত্রটি। বাংলা ট্রিবিউনের যে বৈশিষ্ট্যগুলো পাঠকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে তা হলো এর বস্তুনিষ্ঠতা। এটি এর সবচেয়ে বড় শক্তি। সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রথম চাওয়া থাকে সংবাদ পরিবেশনায় বস্তুনিষ্ঠতা। এই অনলাইন পোর্টালটির বস্তুনিষ্ঠতার বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। কলাম পাঠিয়ে অনেকবার জবাবদিহি করতে হয়েছে, যেসব তথ্য-উপাত্ত-বক্তব্য উল্লেখ করেছি, তার পক্ষে প্রমাণ আছে কিনা? একবার কলামের পক্ষে আমার প্রমাণ পাঠালাম। আমার পাঠানো প্রমাণের নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হলো। কেননা, একটি সংবাদপত্রের যে রেফারেন্সকে আমি প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছি, তাতে ছিল ‘সূত্রমতে’, ‘জানামতে’ ইত্যাদি। এ ধরনের প্রমাণ বাংলা ট্রিবিউনের বস্তুনিষ্ঠতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে যথেষ্ট নয়। তাই কলামের ওই অংশটুকু বাদ।
এরপর আছে বাংলাদেশের প্রথম সারির অনেক সংবাদপত্র নিজেদের চিন্তা-চেতনা ও মতাদর্শকে আড়াল করতে সত্যের ওপর মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষকে একই সমতলে দাঁড় করিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জিয়াকে এক কাতারে শামিল করে তথাকথিত নিরপেক্ষতার বটিকা পাঠককে সেবন করাতে চায়। একটি কলাম বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশ করলে পরবর্তী কলাম জিয়াউর রহমানের ওপর  প্রকাশ করে এক ধরনের ধূর্ততার ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলা ট্রিবিউন ঠিক তার বিপরীত। মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কোনও অস্পষ্টতা না রেখে এই অনলাইন পোর্টালটি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার মতাদর্শিক বিশ্বাসের নির্জলা সত্যকে কোনও পোশাক না পরিয়েই পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বুক ফুলিয়ে সত্যিটা তুলে ধরে। মুক্তিযুদ্ধের আড়াল হওয়া ইতিহাসকে পাঠকের সামনে তথ্য-উপাত্তসহ তুলে ধরে অকৃপণভাবে, সাহসিকতার সঙ্গে।
এই সংবাদমাধ্যমটির আরেকটি বড় আকর্ষণ সাহসী সাংবাদিকতা। আমাদের সংবাদপত্র জগতে এক ধরনের ট্যাবু কাজ করে ধর্মের কিছু বিষয় সংবাদপত্রের এখতিয়াভুক্ত নয়। তাই সচেতনভাবেই এসব এড়িয়ে যায় প্রায় সব সংবাদপত্র। বাংলা ট্রিবিউন এর ব্যতিক্রম। সাহসিকতার সঙ্গে ট্যাবুকে মোকাবিলা করে ধর্মের নামে চলা অধর্মকে পাঠকের সামনে প্রকাশ করতে দ্বিধা করে না। ইসলামি ওয়াজের নামে রাজনীতি, বিষোদগার ইত্যাদি বিষয়ে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউন পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দুর্নীতি, মাদক, সামাজিক অবিচার ও শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দুর্বিনীত সাহসী অবস্থানের জন্যও বাংলা ট্রিবিউন নন্দিত পাঠক সমাজের কাছে।
বিষয়-বৈচিত্র্য পত্রিকাটির পাঠক আকর্ষণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। জাতীয়, আন্তর্জাতিক, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, কলাম, বিজনেস, বিনোদন, খেলা, টেকলাইফ, সাহিত্য, জার্নি, এক্সক্লুসিভসহ আরও অনেক বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদন, ফিচার ইত্যাদি পরিবেশন করে থাকে বাংলা ট্রিবিউন। বেশিরভাগ পাঠকেরই এসব বিষয় পছন্দ। সাহিত্যের পাতায় প্রবন্ধ/নিবন্ধ, ছোট গল্প, ধারাবাহিক গল্প, কবিতা, বিশেষ সংখ্যা, নতুন বইয়ের খবর, সাক্ষাৎকার, রিভিউ, পাঠকের মন্তব্য পাঠককে উৎসাহিত করে পোর্টালটিকে বেছে নিতে।
নিরপেক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করে বাংলা ট্রিবিউন পাঠকের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সমর্থ হয়েছে। পোর্টালটির পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে প্রত্যাশা, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথিকৃত হয়ে বাংলা ট্রিবিউন ততদিন বেঁচে থাকুক যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, বাঙালি থাকবে, বাঙালি সংস্কৃতি থাকবে, বাঙালির হৃদয়ে আবেগ-অনুভূতি ও উত্তাপ থাকবে।
লেখক:  অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: zhossain1965@gmail.com